জামালগঞ্জ – সুনামগঞ্জ সড়ক পথে যোগাগের ক্ষেত্রে জামালগঞ্জের লাখো মানুষ চরম দুর্ভোগ আর দুর্দশা পোহাচ্ছেন। স্বধীনতার ৫১ বছর পেরিয়ে গেলেও জামালগঞ্জ-সুনামগঞ্জ সড়ক যোগাযোগে যাত্রীরা আজো আলোর মুখ দেখেননি। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই প্রতি দিন চলতে হচ্ছে তাদের এই সড়কে পথে।
জামালগঞ্জ-সুনামগঞ্জ সড়কে জামালগঞ্জ ছাড়াও ধর্মপাশা, মধ্যনগর ও নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলার কিয়দাংশ যাত্রীরাও সিলেট-সুনামগঞ্জে যাতায়াত করেন।
দিরাই রাস্তার মোড়ে কাঠইর নামক রাস্তা থেকে জামালগঞ্জ সদর পর্যন্ত প্রায় ১৯ কিলোমিটার সড়কের বেহাল দশা, ভাঙ্গা ও খানাখন্দের কারনে যাত্রী চলাচলে সীমাহীন দুর্ভোগ ও দুর্দশা যেন পিছু ছাড়ছেনা।
এই সড়কের জামালগঞ্জের প্রবেশদ্বার উজ্জ্বল পুর নামক স্থানে ভাঙ্গা সড়কে ও ইট সলিং এর কারনে প্রায়ই দুর্ঘনার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এই স্থানটি এখন যাত্রীদের মরন ফাঁদে পরিনত হচ্ছে। যে কোন মুহুর্তেই বড় ধরনের দুর্ঘটনার শিকার হতে পারেন যে কেউ। বর্ষায় বৃষ্টির কারনে ও সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধিতে যে কোন মুহুর্তে উজ্জ্বল পুরের অংশ ভেঙ্গে যান চলাচল বন্ধ হওয়ার আশংকা করছে যাত্রী ও চালকরা।
জামালগঞ্জ থেকে রোগী কে সুনামগঞ্জ কিংবা সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিতে হলে চরম দুর্দশায় পড়তে হয় রোগীর স্বজনদের। স্থানীয় গাড়ি চালক ও যাত্রীরা জানান, এই সড়ক তাদের জীবনের গতিশীলতা কমিয়ে দিয়েছে। চরম দুর্ভোগ আর জীবনের ঝুঁকি নিয়েই চলতে হচ্ছে তাদের।
এ ছাড়া জামালগঞ্জ সদরের নতুন পাড়ার মুল সড়কের ইট সলিং, নয়াহালট ও উত্তর কামলাবাজ গ্রামের অভ্যন্তরিন সড়ক আজো সংষ্কার না হওয়ায় রোগী, বয়ষ্ক মানুষ, শিশু ও গর্ভবতী মাদের উপজেলা স্বাস্থ কমপ্লেক্সের নিয়ে আসতে দুর্দশা পোহাতে হচ্ছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ২০২৩ সালে বন্যার পর থেকে এক বছরেও সড়কে যান চলাচল যোগাযোগ স্থাপনে সরকারিভাবে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। ফেনারবাঁক ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামের বাসিন্ধা মুহিবুর রহমান বলেন, এই রাস্তায় একবার গেলে আরেক বা যাওয়ার মন চায়না। কয়েক দিন আগে আমার আত্মীয় উজ্জ্বল পুর ভাঙ্গায় দুর্ঘটনার শিকার হয়। আল্লাহ্ র মেহেরবানে তারা বেঁচে আছে। বড় ধরনের দুর্ঘটনা হলে কি যে হতো বলার ভাষা নেই। দ্রুত কাজ করার জন্য তিনি সরকারের কাছে জোর দাবী জানান।
নোয়াগাঁও-বাহাদপুর গ্রামের ইজিবাইক চালক দিলোয়ার হোসেন বলেন, ‘বন্যার সময় জাল্লাবাজ গ্রামের ব্রিজের দুই পাশের পাকা সড়ক ভেঙে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। হেমন্ত মোওসুমে কিছু কাজ করে যার কারণে যাত্রীদের ঝুঁকি নিয়ে চলতে দুর্ভোগ হচ্ছে এবং যাত্রী ও আমাদের গাড়ি চালাতে কষ্ট হচ্ছে।’ দ্রুত এই সড়ক মেরামত চাই।
কলকতখাঁ গ্রামের বাসিন্দা সাগর মিয়া বলেন, রাস্তা ভাঙার কারণে মানুষের কী যে কষ্ট হচ্ছে তা বলার মতো না। রাস্তা ভাঙার কারণে গাড়ি ভাড়া বেড়ে গেছে। আমরা জীবন হাতে নিয়া চলাচল করি।
সিএনজি চালক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘রাস্তা ভাঙার কারণে সুনামগঞ্জ থেকে সরাসরি জামালগঞ্জে যাওয়ায় মার দুধ মুখ দিয়া বাইর হয়। যতটুকু রাস্তা যাওয়া যায় তাও ভাঙাচোরা ও গর্তে ভরা। একবার কেউ এদিকে গেলে দ্বিতীয় বার যেতে চায় না।
এ ব্যপারে জানতে চাইলে জামালগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মো: আব্দুল মালেক বলেন, ২০২২ সালে ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ এই সড়কের জামালগঞ্জ অংশের জরুরী মেরামতে কিছু কাজ করে যান চলাচলে উপযোগী করে দেয়া হয়েছে। আগামী অর্থ বছরে ” পল্লী অবকাঠামো পূর্নস্থাপন এর লক্ষে টেকসই উন্নয়নের জন্য প্রাকলন প্রস্তুতির কাজ চলছে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা, মধ্যনগর ও তাহিরপুর উপজেলায় ২০২২ সালে বন্যায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক গুলো এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক টিমকে নিয়ে কয়েক দফা পরিদর্শন করেছি। তারা ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা পরিদর্শন করে প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্মতি ও অর্থ যোগানের আশ্বাস দিয়েছেন। জামালগঞ্জ-সুনামগঞ্জ এই সড়কটি সহ ধর্মপাশা, মধ্যনগর ও তাহিরপুর উপজেলার সকল সড়কেই আগামী মোওসুমে বিশেষ প্রকল্পের মাধ্যমে কাজ হবে। এই কাজ বাস্তবায়ন হলে, সুনামগঞ্জ-সিলেটের সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে মাইল ফলক হয়ে থাকবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাউছার উদ্দিন সুমন
নির্বাহী সম্পাদক: আনিছুর রহমান পলাশ
বার্তা সম্পাদক: শহিদুল ইসলাম রেদুয়ান
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: নুরুল হক, শহিদ মিয়া