মাগুরা জেলা প্রতিনিধি
মাগুরা মহম্মদপুর উপজেলার দীঘা ইন্তাজ মোল্লা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দপ্তর ছিলেন মোঃ বাকী চৌধুরী, পিং- মৃত আঃ সালাম চৌধুরী, গ্রাম- বিলখানিদাহ, ডাকঘর- দীঘা, থানা – মহম্মদপুর, জেলা- মাগুরা। পরিতাপের ঘটনা এই যে, আব্দুল বাকী চৌধুরী দীঘা ইন্তাজ মোল্লা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ১/১/১৯৭৭ সাল থেকে দপ্তরী পদে চাকুরী করিয়া আসিতেছিলেন। দপ্তর বাকী চৌধুরীর ৮ম শ্রেণীর সার্টিফিকেট, জন্ম নিবন্ধন, জাতীয় পরিচয় আইডি, বেতন ভাতা উত্তোলন এমপিও কোডের জন্ম তারিখ ১/১২/১৯৫৮ সাল। কেরানী গোলাম সরোয়ারের চাকুরির বয়স ৬০ বছর পূর্ণ হয়ে বিদ্যালয় থেকে চলে যাওয়ার প্রাক্কালে বাকী চৌধুরীকে জানায়, আব্দুল বাকী চৌধুরী তোমার জন্ম তারিখ এমপিও কোডে ভুলক্রমে ১/১২/১৯৫৭ হইয়া আসিতেছে। দপ্তর বাকী চৌধুরী বিষয়টি প্রধান শিক্ষক মোঃ ইউনুস আলীকে অবহিত করে। প্রধান শিক্ষক মোঃ ইউনুস আলী বাকী চৌধুরীকে বলে, বয়স সংশোধনের জন্য একটা আবেদন করেন। বাকী চৌধুরী আবেদন করলে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটি বয়স সংশোধনের দায়িত্ব প্রদান করেন। প্রধান শিক্ষক ইউনুস আলী বিষয়টি বাকীকে জানান এবং বাকী বিদ্যালয়ের যথারীতি দায়িত্ব পালন করে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে বেতন ভাতা উত্তোলন করে। কিন্তু ২০১৮ সালের জানুয়ারী মাসে দৈনিক সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত হয়, দপ্তর বাকী চৌধুরীর পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ। বাকী চৌধুরী পত্রিকায় প্রকাশিত নিয়োগের বিষয়ে প্রধান শিক্ষক ইউনুস আলীকে জানাইলে তিনি জানান, তোমার চাকুরি শেষ এবং আজ থেকে তোমাকে আর স্কুলে আসতে হবে না।
মূল ঘটনা, কেরানি গোলাম সরোয়ারের চাকরির বয়স শেষ হলে, তখন বাকী চৌধুরীকে বলে এমপিও কোডে ভুলক্রমে তোমার বয়স ১ বছর বেশি হয়ে গেছে। তখন বাকী চৌধুরী ২৩/৮/২০১৭ সালে বরাবর মহাপরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ঢাকা বাংলাদেশ, মহম্মদপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের মাধ্যমে আবেদন প্রেরণ করেন। আবেদনটির প্রেরক ছিলেন, প্রধান শিক্ষক/সম্পাদক দীঘা ইন্তাজ মোল্লা মাধ্যমিক বিদ্যালয় সি এফ ৭৫৩২০৬ (প্রধান শিক্ষক ইউনুস আলীর সিলসহ সাক্ষর) বাকী চৌধুরীর ৮ম পাশের, বিদ্যালয়ের যোগদান পত্র, নিয়োগ পত্র (সত্যায়িত প্রধান শিক্ষক ইউনুস আলী)। বাকী চৌধুরীর বিষয়টা নিয়ে ২৬/৮/২০১৭ সালের বিকাল ২ টা থেকে ৫.৩০ সভার কার্য্য বিবরণী বহিতে সভাপতি এ্যাডভোকেট এ বি এম তরিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। সভার ৯ নং সিরিয়ালে লেখা হয় দপ্তরী বাকী চৌধুরী সঠিক জন্ম তারিখ ১/১২/১৯৫৮ করার জন্য যাবতীয় কাগজপত্র মহাপরিচালকের দপ্তরে প্রেরণ করার জন্য প্রধান শিক্ষক সাহেবকে বিশেষ ভাবে দায়িত্ব প্রদান করা হলো।
এরপর ৫ মাস অতিবাহিত হয়ে গেলে এই বিষয়ে বিদ্যালয় থেকে কোন সঠিক তথ্য বা উত্তর না পেলে আব্দুল বাকী চৌধুরী মনের রাগ ও দুঃখে সভাপতি, প্রধান শিক্ষক, থানা শিক্ষা অফিসার ও জেলা শিক্ষা অফিসার এর বিরুদ্ধে, বাকী চৌধুরী বাদী হয়ে তার আইনজীবী এ্যাডভোকেট আলহাজ্ব মুন্সি লুৎফর রহমান মাধ্যমে মাগুরা সহকারী জজ সমীর মল্লিকের তত্ত্বাবধানে মাগুরা কোর্টে মামলা করেন ৪/২/২০১৮ সালে যার কেস নম্বর ৩৪১৮, আর এই কেসের রায় মাগুরা আদালত বাদী বাকী চৌধুরী পক্ষে তার ১ বছরের বেতন ও সারা জীবনের পেনশনের টাকা সঠিক ভাবে বিবাদী পক্ষকে আদেশ প্রদান করেন। ১৩/২/২০২০ সালে বাকী চৌধুরীর রায় প্রদান করেন সহকারী জজ রোজিনা সুলতানা।
এরপর বিবাদী পক্ষ দীঘা ইন্তাজ মোল্লা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইউনুস আলী ও সভাপতি এ বি এম তরিকুল ইসলাম, দপ্তর বাকী চৌধুরীর রায় কেসের বিপক্ষে আপীল করে যার কেস নম্বর ২১/২০২০ এ্যাডভোকেট মজিদ-২ আপিলের তারিখ ১৫/৩/২০২০ সাল।
এনপিও সিটে জন্ম তারিখ সংশোধনের জন্য মাগুরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, শিক্ষা ও কল্যাণ শাখা ১৬ জুলাই ২০১৮ সাল, নেহের নিগার তনু বরাবর আবেদন করেন দপ্তর বাকী চৌধুরী। জন্ম তারিখ সংশোধন প্রসঙ্গে মহম্মদপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের কার্যালয়, মহম্মদ আনোয়ার হোসেন বরাবর ১১/০২/২০১৮ সালে এমপিও কোড নম্বর ৫৭০২০৫১৩০১ বাকী চৌধুরীর ইনডেক্স নম্বর ৭৫৩২০৬ আবেদন করেন। দীঘা ইন্তাজ মোল্লা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাসিক বেতন শীট ৭/১/২০১৮ সালে দেখা যায় দপ্তর বাকী চৌধুরীর বয়স ১/১২/১৯৫৮ সাল। রুপালী ব্যাংক মাগুরা শাখা ফেব্রুয়ারী ১৯৯৮ সাল বেতন ভাতা সীটে দেখা যায়, বাকী চৌধুর ইনডেক্স নম্বর ৭৫৩২০৬ বয়স ১/১২/৫৮ সাল। আর দীর্ঘ ১৯ বছর পর জুলাই ২০১৭ সালে সোনালী ব্যাংক মহম্মদপুর শাখার বেতন ভাতা সীটে দেখা যায়, বাকী চৌধুরী ইনডেক্স নম্বর ৭৫৩২০৬, ৩১/০৭/২০১৭ সালে বয়স ১/১২/৫৭ বছর। এই ১ বছর বয়স বেশিই হলো এই ঘটনার মূল গোপন রহস্য। দীঘা ইউনিয়নের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এলাবাসীর লোকজন জানায়, আর এই সুযোগে দপ্তর বাকী চৌধুরীকে সুকৌশলে সরিয়ে দিয়ে, দীঘা ইন্তাজ মোল্লা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি যোগসাজশে দপ্তর পদে নিজ আত্মীয় স্বজন নিয়োগ দিয়েছে।
এ বিষয়ে দীঘা ইন্তাজ মোল্লা মাধ্যমিক প্রধান শিক্ষক মোঃ ইউনুস আলীর সাথে কথা হলে, তিনি দৈনিক কালান্তরকে বলেন, আমার ও সভাপতির বিরুদ্ধে দপ্তর বাকী চৌধুরী আদালতে মামলা করেছে। সে জন্য আমাদের মান সম্মানের হানী ঘটেছে, সে মামলা তুলে নিলে তার ১ বছরের টাকা ও পেনশনের প্রায় দশ লাখ টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা করবো। নিয়োগের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, দপ্তর পদে আবেদন দরখাস্ত পড়েছিলো মাত্র ৪ জন, তার ভিতর থেকে আমরা যোগ্য চাকুরী প্রার্থীকে নিয়োগ কমিটিতে বাছাই করেছি এবং যথাযথ সরকারি বিধিমালা মোতাবেক জাতীয় দৈনিক সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত করে চাকরির ব্যবস্থা গ্রহণ করে দেওয়া হয়েছে। এই নিয়োগের কেরানী পদে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এ্যাডভোকেট এ বি এম তরিকুল ইসলামের ভাগ্নে রাজিবকে এবং দপ্তর পদে প্রধান শিক্ষক ইউনুস আলীর মামাতো ভাই মফিজকে চাকরি দেওয়া হয়েছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাউছার উদ্দিন সুমন
নির্বাহী সম্পাদক: আনিছুর রহমান পলাশ
বার্তা সম্পাদক: শহিদুল ইসলাম রেদুয়ান
সাব এডিটর: আবু তাহের, আফতাব উদ্দিন।