সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: ‘শহীদ মিনার বইয়ে দেখছি, ছবিও আঁকাইছি, তবে শহীদ মিনারের সামনে গেছি না, স্কুলে শহীদ মিনার অইলে (হলে) দেখতে পারমু’। ‘শহীদ মিনারের ছবি স্যারে দেখাইছইন, বইও আছে, আমরার এলাকাত নাইতো (নেই) ইতার লাগি (এজন্য) সামনা সামনি দেখছি না।’
জামালগঞ্জ উপজেলার রূপাবালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মনিরা আক্তার ও মিজানুর রহমান শহীদ মিনার নিয়ে নিজেদের উপলব্দির কথা এভাবে জানালো।
শহীদ মিনার কেন করা হয়। ভাষা দিবসে বা অন্যান্য দিবসে কেনই বা ওখানে যেতে হয়, সেটিও ভালো করে বুঝাতে পারলো না এই দুই শিক্ষার্থী।
জানা গেল, ওই বিদ্যালয়ের পাঁচ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে কোন শহীদ মিনার নেই। গেল বছরের ১৩ সেপ্টেম্বরের আগে পর্যন্ত এই বিদ্যালয়ের নাম ছিল জিন্নাহ্ মোমোরিয়াল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ১৪ সেপ্টেম্বর সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নাম পরিবর্তন করে বিদ্যালয়টির নতুন নামকরণ করেছেন রূপাবালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয় কেবল নয়। সুনামগঞ্জের হাওর এবং প্রত্যন্ত এলাকার বেশির ভাগ বিদ্যালয়ের প্রাথমিক শিক্ষার্থীরাই শহীদ মিনার দেখে বড় হয়ে ওঠছে না। কেবল ছবিতেই দেখছে শহীদ মিনার।
রূপাবালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দানবেন্দ্র কুমার সরকার বললেন, শহীদ মিনার নিয়ে ক্লাসে আলোচনা হয়। বইয়ে পড়ানো হয়। কিন্তু চোখের সামনে থাকলে শিক্ষার্থীদের মাথায় আরও বেশি ঢুকতো, কেন শহীদ মিনার হলো, এখানে কোন কোন দিবসে কী করতে হবে।
এই উপজেলার বিনাজুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকও জানালেন, বিদ্যালয়ের পাঁচ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে কোন শহীদ মিনার নেই।
সুনামগঞ্জ জেলার ১৪৭৫ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে শহীদ মিনার নেই ১২৯২ টিতে। এই বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের কাছে বইয়ের অন্য পড়াশুনার মতই শহীদ মিনার কেবল পড়াশুনার বিষয়।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোহন লাল দাস বললেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার জন্য সরাসরি কোন বরাদ্দ দেওয়া হয় না। অনেক প্রতিষ্ঠানে স্লিপের বরাদ্দ দিয়ে শহিদ মিনার করেন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা। আবার কোথাও কোথাও এখন এলাকাবাসীর উদ্যোগেও শহীদ মিনার হচ্ছে।
তিনি জানালেন, স্থানীয় উদ্যোগে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় ১০ টি. দোয়ারাবাজারে ১৮টি, বিশ্বম্ভপুরে ৩টি, ছাতকে ৩৫টি, তাহিরপুরে ১টি, জামালগঞ্জে ৯টি, ধর্মপাশায় ১২টি, শাল্লায় এক, দিরাইয়ে ৬টি, জগন্নাথপুরে ২০টি এবং শান্তিগঞ্জে ৫ টি শহীদ মিনার গত কয়েক বছরে নির্মিত হয়েছে। বললেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি স্থানীয় উদ্যোগে অন্য অন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়েও যেন শহীদ মিনার গড়ে ওঠে।’
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাউছার উদ্দিন সুমন
নির্বাহী সম্পাদক: আনিছুর রহমান পলাশ
বার্তা সম্পাদক: শহিদুল ইসলাম রেদুয়ান
সাব এডিটর : এ. এস. খালেদ