সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি।
সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নূরুল হুদা মুকুটকে জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কর্তৃক সরাসরি ‘অব্যাহতি’ প্রদান করা হয়েছে। এ জাতীয় পদক্ষেপ কেন্দ্রর এখতিয়ারের মধ্যে থাকলেও এক্ষেত্রে সেটা মানা হয়নি।
সোমবার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ মতিউর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমন স্বাক্ষরিত একটি ‘অব্যাহতিপত্র’ নূরুল হুদা মুকুটটের কাছে পাঠানো হয়েছে। জেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় শৃঙ্খলা অমান্য করার কারণে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি পদসহ দলীয় সকল পদ-পদবী থেকে তাঁকে ‘অব্যহতি’ প্রদান করা হয়েছে বলে পত্রে উল্লেখ করা হয়।
জেলা কমিটির সহ-সভাপতি পদমর্যাদার একজন নেতাকে কেন্দ্রের পরিবর্তে জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কর্তৃক সরাসরি অব্যাহতি প্রদানের করায় বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে জেলার রাজনৈতিক অঙ্গণে। এমন কর্মকান্ডকে ‘অগঠনতান্ত্রিক’ ও ‘ছেলেমানুষিসূলভ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন মুকুট।
উল্লেখ্য, সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের চলমান নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট খায়রুল কবির রুমেন। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইমনের বড়ভাই। অন্যদিকে, নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জেলা আওয়ামী লীগের অপর সহ-সভাপতি ও গেল নির্বাচনে বিজয়ী চেয়ারম্যান নূরুল হুদা মুকুট। দলীয় রাজনীতিতে মুকুটের সাথে চরম দীর্ঘদিনের বিরোধ রয়েছে ইমনের। গেল জেলা পরিাষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মুকুটের কাছে বিপুল ভোটে পরাজিত হন ইমন।
এদিকে, মুকুটকে অব্যাহতি প্রদান সংক্রান্ত চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, আপনি নিশ্চয়ই অবগত আছেন যে, চলমান জেলা পরিষদ নির্বাচনে ৬১টি জেলায় চেয়ারম্যান পদে পদে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনা দলীয় মনোনয়ন প্রদান করেন। কিন্তু আপনি (নুরুল হুদা মুকুট) দলের নির্দেশ অমান্য করে দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে নির্বাচনে অংশগ্রহন করে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেন। এরূপ পরিস্থিতিতে গত ১৭ সেপ্টেম্বও জেলা আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী কমিটির জরুরি সভা আহবান করে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত মোতাবেক আপনাকে বিদ্রোহী প্রার্থী থেকে মনোনয়ন প্রত্যাহারের অনুরোধ করা হয়। প্রার্থীতা প্রত্যাহরের তারিখ অতিক্রম হওয়ায় জেলা কমিটির উক্ত রেজুলেশনসহ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বরাবর হস্তান্তর করার পর তাঁর অনুমতিক্রমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার নির্বাচন জনপ্রতিনিধি মনোয়ন বোর্ডের সিদ্ধান্ত অমান্য করায় গঠনতন্ত্রের ৪৭(১১) ধারাবলে আপনাকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, সুনামগঞ্জ জেলার সহ-সভাপতি পদসহ দলীয় সকল পদবী থেকে অব্যহতি প্রদান করা হলো।
এদিকে, পরবর্তীতে নুরুল হুদা মুকুট এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, এমন সংবাদে আমি বিস্মিত। তাঁদের এরকম বক্তব্য ও কার্যক্রম সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক, অগঠনতান্ত্রিক ও এখতিয়ার বহির্ভূত। মূলত আসন্ন নির্বাচনে ভোটারদের বিভ্রান্ত করার অসৎ উদ্দেশ্যে তাঁরা এরকম অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছেন। কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির অনুমোদন ব্যতিরেকে জেলা শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক জেলা কমিটির কোনো সদস্যকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি প্রদানের এখতিয়ার রাখেন না। শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা কেবল কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির হাতে রয়েছে।
দলের চরম দুঃসময়ে আওয়ামী লীগেকে সুসংগঠিতকরণের পাশাপাশি কোনও দিন দলীয় প্রতীক নৌকার না করার কথা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করে মুকুট আরো বালেন, বর্তমান কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ কয়েকজন অতীতে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তকে অবজ্ঞা করে সক্রিয়ভাবে নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধাচারণ করেছেন। জেলা কমিটির সদস্যদের মতামত নিয়ে সভাপতি ও সাধরণ সম্পাদকের অগঠনতান্তিক কার্যক্রমের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে সুপারিশ পাঠাবেন বলে জানান মুকুট।
এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমন বলেন, দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেবের নির্দেশেই নূরুল হুদা মুকুটকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
একই দাবি করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ মতিউর রহমানও।
এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেন, মুকুটকে অব্যাহতি প্রদান প্রসঙ্গে জেলা কমিটির পক্ষ থেকে আমাকে কিছু জানানো হয়নি। আমি জানি না তারা কি করছে না করছে।
বিষয়টি গঠনতান্ত্রিক কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা প্রশ্নের উত্তর আমরা দলীয় ফোরামে আলোচনা করব। আগে চিঠিটা হাতে আসুক। তারপর বলতে পারব।