শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২:২৩ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ
হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির তৃতীয় সম্মেলনে হাওর বিষয়ক মন্ত্রনালয় গঠনের দাবি।দূর্নীতির বিষবৃক্ষে জাতি দিশেহারা, মুখ বন্ধের শেষ কথায় ?সুনামগঞ্জের কুস্তি খেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচনহজ্জের অন্তরালে অবৈধ ভাবে একাদিক বিয়ে করছেন আয়েশাছাতক-দোয়ারাবাজারে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের পুষ্টি গুণ বিস্কুট বিতরণ।শান্তিগঞ্জে নতুন করে যাত্রা শুরু করলো রুরাল ডেভেলপমেন্ট হেল্থ সেন্টার এন্ড ডায়াগনস্টিক।বিশ্বম্ভরপুর থানায় ব্রেস্ট ফিডিং কর্ণার ও লাইব্রেরির উদ্ভোধন। ছাতকে শিক্ষানুরাগী নুর মোহাম্মদ ময়না মিয়া’র ইন্তেকাল।হাওড়ের নেই মাছ : ঋনের চাপে দিশেহারা জেলে।বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব উপাধ্যক্ষ ড.মোঃ আব্দুস শহীদ এমপি অনলাইন ফোরামের উপদেষ্টা মনোনীত হলেন উম্মে ফারজানা ডায়না।

গো-মাংস : সম্প্রদায় ও সাম্প্রদায়িকতা ~মারজান আহমদ চৌধুরী

হাওড় বার্তা ডেস্কঃ
  • সংবাদ প্রকাশ বৃহস্পতিবার, ৩ জুন, ২০২১
  • ৬২৯ বার পড়া হয়েছে

হাওড় বার্তা

বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের ক্যান্টিনে গরুর গোশত রান্না করার ব্যাপারে কিছু হিন্দু ধর্মাবলম্বী আইনজীবী অভিযোগ করেছেন। তারা দাবী করেছেন, সুপ্রিমকোর্ট একটি ‘অসাম্প্রদায়িক’ জায়গা এবং ‘গো-মাংস’ রান্না করা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির খেলাফ। অথচ তাদের এ দাবীটিই সাম্প্রদায়িকতার বহিঃপ্রকাশ। তবে এর বিপরীতে মুসলমানদের পক্ষ থেকে যে বক্তৃতা আসছে, সেটিও উপযুক্ত নয়। অনেকেই এ দাবীকে ‘হিন্দু ধর্মের আদর্শ’ মনে করে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদেরকে অভিযুক্ত করছেন। আদতে তা নয়।

আমাদের একটি বড় সমস্যা হচ্ছে, আমরা সম্প্রদায় ও সাম্প্রদায়িকতাকে একত্রে গুলিয়ে ফেলি। অথচ এ দুটি পরিভাষার মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে। সম্প্রদায় হচ্ছে একটি পরিচয়, প্রক্ষান্তরে সাম্প্রদায়িকতা একটি বৈষম্য। পৃথিবীতে অসংখ্য ধর্মীয়, নৃতাত্ত্বিক, ভাষাগত ও ভৌগলিক সম্প্রদায় রয়েছে। আল্লাহ ভিন্ন ভিন্ন গায়ের রঙ, শরীরের গড়ন, মুখের ভাষা ও জীবন যাপনের অভ্যাস দিয়ে মানুষ সৃষ্টি করেছেন, যেন তাঁর সৃষ্টির মধ্যে বৈচিত্র্যময় সৌন্দর্য বজায় থাকে। সবাই যদি একই রকম (Identical) হয়ে যেত, তাহলে একে অন্যের পরিচয় করা অসম্ভব হয়ে পড়ত।

ওই হিন্দু আইনজীবীরা যদি মনে করেন যে, গরুর গোশত খাওয়া তাদের ধর্মীয় আদর্শের বিপরীত এবং বলেন, আমরা গো-মাংস খাব না, তাহলে সেটি তাদের ধর্মীয় বা সাম্প্রদায়িক বিশ্বাস। এতে কারও কোনো আপত্তি থাকতে পারে না। কিন্তু তারা দাবী করেছেন, গো-মাংস রান্না করা যাবে না। এটি ধর্মীয় বা সাম্প্রদায়িক বিশ্বাস নয়; এটি সাম্প্রদায়িকতা। অর্থাৎ নিজেদের জীবনাচারকে অন্যের ওপর জোরপূর্বক চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা। তাই তাদের দাবীটি ‘হিন্দু ধর্মের আদর্শ’ নয়; বরং ‘হিন্দুত্ব’। হিন্দু ধর্ম (Hinduism) এবং হিন্দুত্বের (Hindutva) মধ্যে বিশাল পার্থক্য রয়েছে। উপনিষদ অনুযায়ী, হিন্দু ধর্মের আদর্শ হচ্ছে ‘বাসুদেব কুটুম্বকাম’। অর্থাৎ, পুরো বিশ্ব একটি পরিবার। এ পরিবারে সবাইকে সাথে নিয়ে বসবাস করার কথা বলা হয়েছে। প্রক্ষান্তরে ‘হিন্দুত্ব’ একটি বৈষম্যমূলক কট্টরপন্থী রাজনৈতিক মনোভাব, যেখানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির আদর্শই নেই। এটি হিন্দু ধর্ম ও সংস্কৃতিকে সবার ওপর জোরপূর্বক চাপিয়ে দেয়ার এবং ভিন্ন মতাবলম্বীদেরকে সরিয়ে দেয়ার দাবী করে। হিন্দুত্বের জনক ছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ও বিনায়ক দামোদর সাভারকর, এবং পরবর্তীতে কেশব বলিরাম হেডগেওয়ার ও মাধবরাও সদাশিবরাও গোলওয়ালকর। ভারতের রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (RSS), বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (VHP), ভারতীয় জনতা পার্টি (BJP) প্রমুখ দলগুলো হিন্দুত্বের স্পষ্ট উদাহরণ। দেখা যায়, ইসলামের সাথে আকাশ-পাতাল মতভিন্নতা থাকার পরও যুগযুগ ধরে মুসলিম সালতানাতের ভেতরে হিন্দুসহ অন্যান্য মূর্তিপূজক সম্প্রদায় নিজেদের অধিকার নিয়ে বসবাস করে আসছিল। কিন্তু হিন্দুত্বের সাথে এই সম্প্রীতি সম্ভব নয়।

একইভাবে যুগযুগ ধরে মুসলিম খিলাফাত ও সালতানাতের ভেতরে ইহুদিরা শান্তি ও সম্মানের সাথে বসবাস করে আসছিল। শতাব্দীর পর শতাব্দী খ্রিস্টানদের হাতে মার খেয়ে ইহুদিরা মুসলিম সালতানাতে এসে আশ্রয় পেত। যখন তাদের মধ্যে যায়নবাদ (Zionism) নামক একটি বৈষম্যমূলক কট্টরপন্থী রাজনৈতিক মনোভাব জন্ম নিল, তখন থেকেই তারা মুসলিমদের সাথে শত্রুতা শুরু করল। হিন্দু ধর্ম ও হিন্দুত্বের মধ্যে যে পার্থক্য, প্রায় একই পার্থক্য ইহুদি ধর্ম ও যায়নবাদের মধ্যে। যায়নবাদীরা মুসলমানদেরকে সরিয়ে দিয়ে নীল থেকে ফোরাত পর্যন্ত পুরো আরব এলাকা দখল করতে চায়। যায়নবাদের জনক ছিলেন থিওডর হার্জেল। পরবর্তীতে এ আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন ওয়াল্টার রথচাইল্ড এবং শেম ওয়াইযমান। তাই ইহুদিদের সাথে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান সম্ভব হলেও যায়নিস্টদের সাথে সম্ভব নয়।

এরকম সাম্প্রদায়িকতার কুফল হচ্ছে, এটি এক সময় সম্প্রদায়কেই বিপদের মুখে ফেলে দেয়। ভারতে গত কয়েক বছরে গরুর গোশত খাওয়ার ‘সন্দেহে’ অনেক মুসলমানকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় এডলফ হিটলার ৬০ লক্ষ ইহুদিকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। এসব ইহুদিদের উল্লেখযোগ্য কোনো অপরাধ ছিল না। বিনাদোষে, কেবল ইহুদি হওয়ার কারণে এরা হিটলারের সাম্প্রদায়িকতার শিকার হয়েছে। আজ একই কাজের পুনরাবৃত্তি হচ্ছে চীনে। চীনের কমিউনিস্ট সরকার প্রায় দেড় কোটি উইঘুর মুসলিমকে ভয়াবহ নিপীড়ন করে যাচ্ছে। তাদের ‘উইঘুর মুসলিম’ পরিচয়কে মিটিয়ে দিয়ে তাদেরকে চায়নিজ বানানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এটি ভয়াবহ সাম্প্রদায়িকতা। অবাক হই, যখন দেখি কিছু মুসলমান হিটলারের এ ঘৃণ্য কাজকে সমর্থন করছেন। অথচ আল্লাহ ও তাঁর রাসূল আমাদেরকে এ শিক্ষা দেননি। ইসলাম কখনও, কোনোভাবেই Ethnic Cleansing তথা জাতিগত গণহত্যা সমর্থন করে না। কেবল ভিন্ন ধর্মাবলম্বী হওয়ার কারণে কারও ওপর নির্যাতন করার অনুমতি ইসলাম আমাদেরকে দেয়নি, কোনোভাবেই দেয়নি। আল্লাহ আমাদেরকে সবার প্রতি ইহসান করার হুকুম দিয়েছেন।

আমরা ওই হিন্দু আইনজীবীদের দাবীর বিরুদ্ধাচরণ করছি। এজন্য নয় যে, তারা হিন্দু। বরং আমরা বিরুদ্ধাচরণ করছি, কারণ তাদের দাবীটি হিন্দু ধর্মের আদর্শ নয়; বরং এটি হিন্দুত্ব।

সর্বশেষ সংবাদ পেতে চোখ রাখুন।

সব ধরনের সংবাদ
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধনকৃত পত্রিকা। © All rights reserved © 2018-2024 Haworbarta.com
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Jp Host BD
jphostbd-2281