ইসলামে যাকাতের গুরুত্ব ও তাৎপর্য
–মুফতি আল আমিন ইসলাম সরকার যুক্তিবাদী
—————————————————-
যাকাত শব্দের আভিধানিক অর্থঃ-
১. বৃদ্ধি পাওয়া
২. পবিত্রতা
৩. প্রাচুর্য
৪. প্রশংসা
৫. জবাই করা ইত্যাদি।
যাকাতের পারিভাষিক অর্থঃ-
আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী (রহ.) বলেন-
নেসাব পরিমাণ সম্পদ এক বছর অতিবাহিত হওয়ার পর তার থেকে একটি অংশ হাশেমী ব্যতীত অন্যান্য দরিদ্রদেরকে প্রদান করার নাম যাকাত।
নেসাবের পরিমাণঃ-
কারো নিকট ২০ মিসকাল তথা ৭.৫ তোলা স্বর্ণ অথবা ২০০ দিরহাম বা ৫২.৫ তোলা রৌপ্য বা এর সমপরিমাণ অর্থ কারো মালিকানায় এক বছর থাকলে তাকে শতকরা ২.৫ টাকা হিসেবে যাকাত দিতে হবে।
যাদের উপর যাকাত ফরজ :-
১. মুসলমান হওয়া।
২. স্বাধীন হওয়া।
৩.জ্ঞান সম্পন্ন ও বালেগ হওয়া।
৪.পূর্ণ নেসাবের মালিক হওয়া।
৫. ঋণগ্রস্ত না হওয়া।
৬. মালের ওপর এক বছর অতিবাহিত হওয়া।
৭. সম্পদ বর্ধনশীল হওয়া।
৮. যাকাতের মাল পূর্ণ নেসাব পরিমাণ হওয়া।
উপরিউক্ত শর্তগুলো যার মধ্যে পাওয়া যাবে, তার মালের মূল্য হিসাব করে শতকরা আড়াই টাকা হারে যাকাত আদায় করতে হবে।
★যাকাতের গুরুত্ব ও ফজিলতঃ-
ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে যাকাত অন্যতম একটি স্তম্ভ।
যাকাত আদায় করা ফরজ।
★মহান আল্লাহ্ তায়ালা বলেন,
আর তোমরা সালাত তথা নামাজ প্রতিষ্ঠা করো এবং যাকাত প্রদান করো।
(সূরা আল মোজাম্মেল আয়াত নং ২০)
★আল্লাহ তায়ালা বলেন-
ٱلَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِٱلْغَيْبِ وَيُقِيمُونَ ٱلصَّلَوٰةَ وَمِمَّا رَزَقْنَٰهُمْ يُنفِقُونَ
যারা ঈমান রাখে গায়েবের প্রতি, নামাজ প্রতিষ্ঠা করে এবং আমি তাদের যা দিয়েছি, তা থেকে ব্যয় করে।
(সূরা বাকারা- আয়াত নং ৩)
★আল্লাহ তায়ালা বলেন-
وَأَقِيمُوا۟ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتُوا۟ ٱلزَّكَوٰةَ وَٱرْكَعُوا۟ مَعَ ٱلرَّٰكِعِينَ
আর তোমরা নামাজ প্রতিষ্ঠা কর, যাকাত দাও এবং রুকুকারীদের সাথে রুকু কর।
(সূরা বাকারা- আয়াত নং ৪৩)
আল্লাহ তায়ালা বলেন-
فَإِن تَابُوا۟ وَأَقَامُوا۟ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتَوُا۟ ٱلزَّكَوٰةَ فَإِخْوَٰنُكُمْ فِى ٱلدِّينِ وَنُفَصِّلُ ٱلْءَايَٰتِ لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ
আর যদি তারা তওবা করে, নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত দেয়, তবে তো তারা তোমাদের দ্বীনি- ভাই। আর আমি বিশদভাবে বর্ণনা করি নিদর্শনসমূহ জ্ঞানী লোকদের জন্য।
(সূরা তাওবা- আয়াত নং ১১)
আল্লাহ তায়ালা বলেন-
إِنَّمَا يَعْمُرُ مَسَٰجِدَ ٱللَّهِ مَنْ ءَامَنَ بِٱللَّهِ وَٱلْيَوْمِ ٱلْءَاخِرِ وَأَقَامَ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتَى ٱلزَّكَوٰةَ وَلَمْ يَخْشَ إِلَّا ٱللَّهَ فَعَسَىٰٓ أُو۟لَٰٓئِكَ أَن يَكُونُوا۟ مِنَ ٱلْمُهْتَدِينَ
নিঃসন্দেহে তারাই আল্লাহর মসজিদ আবাদ করবে যারা ঈমান এনেছে আল্লাহর প্রতি ও শেষ দিনের প্রতি এবং কায়েম করেছে নামায ও আদায় করে যাকাত; আল্লাহ ব্যতীত আর কাউকে ভয় করে না। অতএব, আশা করা যায়, তারা হেদায়েত প্রাপ্তদের অন্তর্ভূক্ত হবে।
(সূরা তাওবাহ আয়াত নং ১৮)
★আল্লাহ তায়ালা বলেন-
ٱلَّذِينَ لَا يُؤْتُونَ ٱلزَّكَوٰةَ وَهُم بِٱلْءَاخِرَةِ هُمْ كَٰفِرُونَ
যারা যাকাত দেয় না এবং তারা আখেরাতের প্রতিও অবিশ্বাসী।
(সূরা হা-মীম আস্ সাজদা আয়াত নং ৭)
★আল্লাহ তায়ালা বলেন-
مَّثَلُ ٱلَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمْوَٰلَهُمْ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ كَمَثَلِ حَبَّةٍ أَنۢبَتَتْ سَبْعَ سَنَابِلَ فِى كُلِّ سُنۢبُلَةٍ مِّا۟ئَةُ حَبَّةٍ وَٱللَّهُ يُضَٰعِفُ لِمَن يَشَآءُ وَٱللَّهُ وَٰسِعٌ عَلِيمٌ
যারা আল্লাহর রাস্তায় স্বীয় ধন সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উদাহরণ একটি বীজের মত, যা থেকে সাতটি শীষ জন্মায়। প্রত্যেকটি শীষে একশ করে দানা থাকে। আল্লাহ অতি দানশীল, সর্বজ্ঞ।
(সূরা বাকারা ২৬১ নং আয়াত)
★যাকাত ও সাদাকা আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায়ঃ-
আল্লাহ তায়ালা বলেন-
خُذْ مِنْ أَمْوَٰلِهِمْ صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمْ وَتُزَكِّيهِم بِهَا وَصَلِّ عَلَيْهِمْ إِنَّ صَلَوٰتَكَ سَكَنٌ لَّهُمْ وَٱللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ
আপনি তাদের সম্পদ থেকে সদকা (যাকাত) গ্রহণ করুন। এর দ্বারা আপনি তাদের পবিত্র করবেন এবং পরিশোধিত করবেন।
আর আপনি তাদের জন্য দোয়া করুন, নিঃসন্দেহে আপনার দোয়া তাদের জন্য সান্ত্বনা স্বরূপ। বস্তুতঃ আল্লাহ সবকিছুই শোনেন, জানেন।
(সূরা তাওবাহ, আয়াত নং-১০৩)।
★আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَٱكْتُبْ لَنَا فِى هَٰذِهِ ٱلدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِى ٱلْءَاخِرَةِ إِنَّا هُدْنَآ إِلَيْكَ قَالَ عَذَابِىٓ أُصِيبُ بِهِۦ مَنْ أَشَآءُ وَرَحْمَتِى وَسِعَتْ كُلَّ شَىْءٍ فَسَأَكْتُبُهَا لِلَّذِينَ يَتَّقُونَ وَيُؤْتُونَ ٱلزَّكَوٰةَ وَٱلَّذِينَ هُم بِـَٔايَٰتِنَا يُؤْمِنُونَ
আর আমাদের জন্য এ দুনিয়াতে ও আখিরাতে কল্যাণ লিখে দিন। নিশ্চয় আমরা আপনার দিকে প্রত্যাবর্তন করেছি।’ তিনি বললেন, ‘আমি যাকে চাই তাকে আমার আযাব দেই। আর আমার রহমত সব বস্তুকে পরিব্যাপ্ত করেছে। সুতরাং আমি তা লিখে দেব তাদের জন্য যারা তাকওয়া অবলম্বন করে এবং যাকাত প্রদান করে। আর যারা আমার আয়াতসমূহের প্রতি ঈমান আনে।
(সূরাঃ আল-আরাফ- আয়াত নং ১৫৬)
★হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা এক জনৈক বেদুঈন নবী করিম (স)-এর নিকট আগমন করল। অতঃপর সে বলল, (হে আল্লাহর রাসূল!) আপনি আমাকে এমন একটি কাজের নির্দেশনা দান করুন, যা করলে আমি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারব। রাসূল (স) বললেন, তুমি আল্লাহর ইবাদত করবে, তাঁর সাথে কাউকে শরিক করবে না, ফরজ নামাজসমূহ প্রতিষ্ঠা করবে, নির্ধারিত যাকাত প্রদান করবে এবং রমদ্বানের রোযা রাখবে।
অতঃপর বেদুঈন লোকটি বলল, সে সত্তার শপথ যাঁর হাতে আমার জীবন! আমি এর থেকে বেশি কিছু করব না এবং কমও করব না। এরপর যখন লোকটি প্রস্থান করল, তখন নবী করিম (স) বললেন, যে ব্যক্তি কোন জান্নাতি লোক দেখে খুশি হতে চায়; সে যেন এই লোকটি দেখে। – (বুখারী – মুসলিম)
★যাকাত পাবে কারাঃ-
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
إِنَّمَا ٱلصَّدَقَٰتُ لِلْفُقَرَآءِ وَٱلْمَسَٰكِينِ وَٱلْعَٰمِلِينَ عَلَيْهَا وَٱلْمُؤَلَّفَةِ قُلُوبُهُمْ وَفِى ٱلرِّقَابِ وَٱلْغَٰرِمِينَ وَفِى سَبِيلِ ٱللَّهِ وَٱبْنِ ٱلسَّبِيلِ فَرِيضَةً مِّنَ ٱللَّهِ وَٱللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ
যাকাত হল কেবল ফকির, মিসকীন, যাকাত আদায়কারী ও যাদের চিত্ত আকর্ষণ প্রয়োজন তাদের হক এবং তা দাস-মুক্তির জন্যে-ঋণ গ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর পথে জেহাদকারীদের জন্যে এবং মুসাফিরদের জন্যে, এই হল আল্লাহর নির্ধারিত বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
(সূরাঃ আত-তাওবাহ আয়াত নং ৬০)
আয়াতের আলোকে সর্বমোট ৮ (আট) শ্রেণির মানুষ যাকাত পাবে।
যেমন-
(১) দরিদ্র
(২) মিসকিন
(৩) যাকাত আদায়কারী
(৪) মন জয় করার জন্য নও মুসলিম
(৫) দাস মুক্ত করার জন্য
(৬) ঋণ গ্রস্ত ব্যক্তি
(৭) আল্লাহর পথে ব্যয় করার জন্য
(৮) এবং মুসাফির।
★নিম্নলিখিত সম্পদের উপর যাকাত ফরজ হয়ঃ-
১. স্বর্ণ
২. রৌপ্য
৩. চতুষ্পদ জন্তু
৪.উৎপন্ন খাদ্যশস্য ও ফসল
৫. ব্যবসায়িক মাল সামগ্রী
৬. নগদ টাকা পয়সা
৭.খনিজ সম্পদ
৮.অন্যান্য সম্পদ।
উল্লেখিত সম্পদসমূহ নেসাব পরিমাণ হওয়ার পর কারো মালিকানায় পূর্ণ এক বছর অতিবাহিত হলে তার উপর যাকাত ফরজ হবে।
★ যে সমস্ত মালের যাকাত দিতে হয় না।
যেমন-
কাপড়-চোপড়, আসবাবপত্র, বাসান-কোসন, বাড়িঘর, বই-পুস্তক, যন্ত্রপাতি, যানবাহন ইত্যাদি মালের উপর জাকাত নেই। কারণ উক্ত মালামাল নিজের প্রবৃদ্ধি সাধনে সক্ষম নয়।
★রমদ্বান মাসে যাকাত আদায়ঃ-
রমদ্বানের গুরুত্ব ও ফজিলত অপরিসীম। এ মাসেই পবিত্র কুরআন শরীফ অবতীর্ণ হয়েছে। রমদ্বান মাসের বরকতে অন্যান্য সমস্ত ইবাদতের সাথে সাথে যাকাতের মর্যাদাও বহু গুণে বৃদ্ধি পায়। যেমন-
রমদ্বানে একটি ফরজ ইবাদত করলে অন্যান্য মাসের সত্তরটি ফরজ ইবাদাতের ছাওয়াব পাওয়া যায় এবং এ মাসে একটি নফল আদায় করলে, অন্য মাসে একটি ফরজ আদায়ের সমান সওয়াব লাভ হয়, সে মতে রমদ্বান মাসে একটি নফল দান করলে, অন্য মাসে একটি ফরজ যাকাত আদায় করার ছাওয়াব লাভ হয়। আর এ মাসে একটি ফরজ যাকাত আদায় করলে, অন্য মাসে সত্তরটি ফরজ যাকাত আদায় করার ছাওয়াব পাওয়া যাবে।
রমদ্বান মাস ছাড়াও অন্য মাসে যাকাত দিলে তা আদায় হবে।
কিন্তু অতিরিক্ত সওয়াব থেকে বঞ্চিত হবে।
★যাকাত না দেওয়ার পরিণামঃ-
আল্লাহ তায়ালা বলেন-
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓا۟ إِنَّ كَثِيرًا مِّنَ ٱلْأَحْبَارِ وَٱلرُّهْبَانِ لَيَأْكُلُونَ أَمْوَٰلَ ٱلنَّاسِ بِٱلْبَٰطِلِ وَيَصُدُّونَ عَن سَبِيلِ ٱللَّهِ وَٱلَّذِينَ يَكْنِزُونَ ٱلذَّهَبَ وَٱلْفِضَّةَ وَلَا يُنفِقُونَهَا فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ فَبَشِّرْهُم بِعَذَابٍ أَلِيمٍ
হে ঈমানদারগণ! পন্ডিত ও সংসারবিরাগীদের অনেকে লোকদের মালামাল অন্যায়ভাবে ভোগ করে চলছে এবং আল্লাহর পথ থেকে লোকদের নিবৃত রাখছে। আর যারা স্বর্ণ ও রূপা জমা করে রাখে এবং তা ব্যয় করে না আল্লাহর পথে, তাদের কঠোর আযাবের সুসংবাদ শুনিয়ে দিন।
يَوْمَ يُحْمَىٰ عَلَيْهَا فِى نَارِ جَهَنَّمَ فَتُكْوَىٰ بِهَا جِبَاهُهُمْ وَجُنُوبُهُمْ وَظُهُورُهُمْ هَٰذَا مَا كَنَزْتُمْ لِأَنفُسِكُمْ فَذُوقُوا۟ مَا كُنتُمْ تَكْنِزُونَ
সে দিন জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে এবং তার দ্বারা তাদের ললাট, পার্শ্ব ও পৃষ্ঠদেশকে দগ্ধ করা হবে (সেদিন বলা হবে), এগুলো যা তোমরা নিজেদের জন্যে জমা রেখেছিলে, সুতরাং এক্ষণে অস্বাদ গ্রহণ কর জমা করে রাখার।
(সূরা তাওবাহ আয়াত নং ৩৪-৩৫)
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল (স) ইরশাদ করেছেন, যাকে আল্লাহ তায়ালা ধন সম্পদ দান করেছেন আর সে তার যাকাত প্রদান করেনি, কিয়ামতের দিন তার সম্পদকে টেকো মাথা সাপ বানানো হবে যার চক্ষুর উপর দুটি কালো বিন্দু থাকবে। উহা কিয়ামতের দিন পরিয়ে দেওয়া হবে তার গলায় বেড়ী স্বরুপ। অতঃপর সাপ তার মুখের দুই চোয়াল দিয়ে কামড়িয়ে ধরবে। তারপর বলবে, আমি তোমার সম্পদ, আমি তোমার সংরক্ষিত ধন। অতঃপর রাসূল (স) একটি আয়াত তিলাওয়াত করেন। আয়াতটির অর্থ ” যারা আল্লাহ প্রদত্ত ধন সম্পদে কৃপণতা করে তারা যেন এ না ভাবে যে, তাদের কৃপণতা তাদের জন্য কল্যাণকর। বরং উহা তাদের জন্য অকল্যাণকর। অতি শীঘ্র কিয়ামতের দিন তাদের গলায় তা বেড়ী স্বরুপ পরিয়ে দেওয়া হবে।-( বুখারী)
ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.) এর খিলাফতকালে আরবের কিছু গোত্র যাকাত দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। যদিও তারা নামাজ পড়তো। কিন্তু আবু বকর সিদ্দীক (রা.) যাকাত না দেওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন।
যেমন-
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন রাসুল (স) ইন্তেকাল করলেন, তখন হযরত আবু বকর (রা) সর্বসম্মতিক্রমে খলিফা নির্বাচিত হলেন। মহানবী (স)-এর ইন্তেকালের সুযোগে তখন আরবদের মধ্যে যারা কুফরি করার তারা কুফরি করল। হযরত আবু বকর (রা) কালবিলম্ব না করে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করলেন।
আবু বকর (রা)-এর যুদ্ধ ঘোষনার সংবাদ পেয়ে হযরত ওমর (রা) বললেন, আপনি এসব লোকদের বিরুদ্ধে কিভাবে যুদ্ধ করবেন? অথচ রাসূল (স) ইরশাদ করেছেন, আমি মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আদিষ্ট হয়েছি, যে পর্যন্ত না তারা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলে। সুতরাং যে ব্যক্তি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলল, সে আমার পক্ষ থেকে স্বীয় জান ও মাল নিরাপদ করে নিল। তবে ইসলামের কোন হক আদায়ে সে যদি ত্রুটি করে তাহলে সেটা ভিন্ন কথা। আর তার হিসাব নিকাশের দায় দায়িত্ব আল্লাহর ওপর ন্যস্ত।
অতঃপর আবু বকর (রা) জবাবে বললেন, আল্লাহর শপথ! আমি অবশ্যই সেই লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব, যারা নামাজ ও যাকাতের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করে। কেননা যাকাত হলো মালের হক। আল্লাহর শপথ! তারা যদি যাকাত স্বরুপ একটি বকরির বাচ্চাও আমাকে দিতে অস্বীকার করে, যা তারা রাসূল (স)- এর নিকট প্রদান করত, তবে আমি তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই যুদ্ধ করব।
হযরত আবু বকর (রা.)- এর জেহাদী প্রত্যয় দেখে ওমর (রা.) বলেন, আল্লাহর শপথ! আমি বুঝতে পারলাম যে, আল্লাহ তায়ালা যুদ্ধের জন্য আবু বকর (রা.)- এর অন্তর খুলে দিয়েছেন। তখন আমি সুস্পষ্টভাবে বুঝতে পারলাম তিনি সঠিক সিদ্ধান্তের ওপরই আছেন। -( বুখারী)
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাউছার উদ্দিন সুমন
নির্বাহী সম্পাদক: আনিছুর রহমান পলাশ
বার্তা সম্পাদক: শহিদুল ইসলাম রেদুয়ান