শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৩৫ পূর্বাহ্ন

কষ্টের ফাইল’ লেখক সামছুন্নাহার নাহার শেলী

হাওড় বার্তা ডেস্ক
  • সংবাদ প্রকাশ রবিবার, ১১ এপ্রিল, ২০২১
  • ৬৬৩ বার পড়া হয়েছে

প্রকাশনা সহযোগিতা:- বি এম বাবলুর রহমান

অস্তির বাতাস বয়ে চলেছে। কখনো পূর্ব থেকে পশ্চিমে,কখনো বা উত্তর থেকে দক্ষিণে। আর বয়ে চলেছে জীবনের গতিশীল চাকা।সঠিক করে বলতে পারব না,সময় টা কখন।ছোট বেলায় কিছু কিছু স্মৃতি কথা আজও মনে পড়ে যায়। মনের অজান্তেই হাসি চলে আসে ঠোঁটের কোণে কোণে। কখনো কখনো নেচে উঠি,কখনো বা শিহরণ জাগে সারা শরীরে,প্রেম প্রেম ভাব জাগে হৃদয়ের মাঝে। আহারে কতই না সুন্দর ছিলো ছোট বেলার সেই দিন গুলি। অভাব ছিলো না আদর,স্নেহ,ভালোবাসার।শ্বাসনের কথা নাই বা বললাম আজি। তবে মায়ের শ্বসন গুলি মিচ করি এখনো,বাবার আদর,দাদির মাখামাখি আজ আর কোথাও পাই নারে।সারাদিন দুষ্টুমি,খেলাধুলা,দুরন্তপনা আর পড়াশোনা তো একটু আছেই।সীমাহীন ছুটে চলা,দুরন্তপনা,এলোমেলো চুল,ছোট বড় খেলনা হাতে,কত যে খুশি খুশি ছিলো সেই সব দিন গুলি। বাঁধন হারা হাসি টুকু আজ ও খুব মিচ করি। ছোট বেলায় সেই হারানো দিন গুলি যদি ফিরে পেতাম,সব কিছু ছেড়ে আবার প্রকৃতির সাজানো বাগানে লুকোচুরি খেলতাম। খুঁজে পেতাম মধু ছন্দ কি আনন্দ।
দিনের আলো রাতে চাঁদ কে জানায়,সময় হয়েছে কিছু টা নিরাবতায়।প্রতি বছরের ডিসেম্বরে শুরু হয় তোড়জোড়,নতুন বছরের জন্য একটা পরিকল্পনা।বছরের শুরুতে বই,পোশাক পরিচ্ছেদ,ব্যাগ,পানির পট সহ সব কিছুই প্রায় নতুন থাকতো।সব কিছু মিলিয়ে খুশি খুশি মনে স্কুলে যেতাম। ছোট ছোট পায়ে চলতে চলতে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ। তার পর পরিবর্তন আসে পোশাকের সঙ্গে সঙ্গে জীবনের। পরিবর্তন হয় চলার পথ টুকু। জীবনে ঠিক ভুল বুঝতে না পারলেও কিছু টা রং চিনতে শিখলাম। পৌছে গেলাম জীবনে আর এক ধাপে।
হাই স্কুলে এসে সব কিছুই আবার অচেনা লাগছে। হটাৎ করেই ধরা বাঁধা নিয়ম। অনেক বই,অধিক সময় স্কুলে থাকা,বেশি পড়াশোনা,শ্বাসনের মাত্রা ও অনেক বেশি। সেটা আবার কড়া শ্বাসন বলে কথা। মজা তো কিছু না কিছু আছেই।নতুন নতুন বান্ধবী। সবাই মিলে একসঙ্গে মজা,একই সাথে দুষ্টুমি। একই রকম পোশাক পরিধান। ছোট খাটো বিষয়ে হেসে লুটোপুটি সারাক্ষণ। জীবনের খোলামেলা চাওয়া গুলি খুশিতে পরিপূর্ণ ছিলো।তবে জবাবদিহিতা এই জীবনের ঢুকে পড়ে আর বিস্তার লাভ করতে থাকে।
বাড়িতে সবার প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। গৃহশিক্ষকের কথা মেনে চলতে হবে। অপরাধ তো অনেক বড় ব্যাপার,বিচ্যুতি ও অনেক কড়াকড়ি। আজো ও মনেপড়ে যায় সেই সব দিনের কথা। দুষ্টুমি আর বাড়াবাড়ির জন্য কত যে দলবেঁধে পিটান খেয়েছি তার হিসাব কে নিবে আর কে দিবে। ইস কত যে কানে ধরছি দুষ্টুমি জন্য,বলে শেষ করা যাবে না।
তার পর টিফিনের সময় সবাই মিলে একসঙ্গে ভাগাভাগি করে খানাপিনা,লুটোপুটি মজা,আজ আর ব্রায়ানিতে ও পাই না। আহারে সেই দিন গুলি আজ শুধুই স্মৃতি পাতায়। তবে বুকের ভেতর জীবান্ত কৈ মাছের মত লাফালাফি করে। খুব মনে পড়ে সবাই ব্যাগ গুলি কে অনেক যত্ন করে রাখতাম। কয়েক জন মিলে প্রায় একই রকমের ব্যাগ কিনেছিলাম।স্কুল ছুটির পর ভাবখানা এমন যে,এটা আমাদের বাবার রাস্তা। আশেপাশের সবাই অনেক চেনা জানা,নেই কোন ভয়,নেই কোন হতাশা।হাসতে হাসতে পেরিয়ে এসেছি স্কুলের সীমানা। চোখ তখন উঁকিঝুঁকি দেয় কলেজের উপর।আর দৃষ্টি থমকে যায় বড় আপুদের কলেজ ফাইলের উপর। কখন আসবে কলেজ জীবন।

মনের মাঝে হাঁটাচলা
বাস্তবতার সাথে কথা বলা
আসলো সেই কলেজের পালা।

হ্যাঁ,সেই জীবন,যার জন্য এতো অপেক্ষা। যেখানে কোন জবাব দিহিতা নেই,শ্বাসন নেই। আছে লাগামহীন জীবন। স্যার,ম্যাডামের হাতে বেত নেই,কানে ধরা নেই,চোখে আগুন নেই। তখন একটু একটু মিচ করতাম স্কুলের ধরাবাধা নিয়ম। কারণ জীবন গড়তে শ্বাসনের প্রয়োজন আছে।ভয়ের মাঝে ও ভালোবাসা আছে। এভাবে সেভাবেই কেটে যায় কলেজের পর্ব।
আসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবন। জীবন কাকে বলে,সেটা অনার্স লাইফে না এলে বোঝা যায় না। এই জীবনে জড়ানো টা বেশি ঘটে।কষ্ট থাকে হৃদয়ের কোণে কোণে ,হাসিঠাট্টা ও আনন্দ থাকে ঠোঁটের কোণে,দায়িত্ব থাকে দৃষ্টিতে দৃষ্টিতে। বাস্তবতার শুরু এখানে, জীবনে আঘাত হানে অনাস্ থেকেই। এখানে থমকে দাঁড়ায় জীবনের মোড়। পিছিয়ে যায় অনেকের ভালোবাসার দাবি।কারণ নিজেকে বাদ দিয়ে অন্য কে নিয়ে ভাবতেই কেটে যায় প্রতিটি প্রহর।দায়িত্ব গুলি এসে যায় জীবনে আর বাঁধা গুলি থেকে যায় মনের মাঝে ।নিজেকে গড়ে তোলার জন্য চেষ্টা করতে হয়।আর কারো দায়িত্ব বেড়ে যায় নিজেকে সোজা করে দাঁড়াতে,মাথা উচু করে রাখতে। আর মাস্টার মানে তো আগুন নিয়ে খেলা।
সেই আগুনে কখনো নিজেকে পুড়িয়ে অন্য কে আলো দেয়,আবার কখনো নিজের জীবনের সকল চাওয়া পাওয়া কে পুড়িয়ে শেষ করে দেয়। এটাই জীবন আর বাস্তবতা। তার পর শুরু হয় চাকরি নামক কানামাছি খেলা।যে খানে চোখ থাকতে ও অন্ধ,আবার কেউ কেউ বলে কপাল মন্দ। নিশ্চত দায়িত্ব পালনের সময়। কেউ নিজের দায়িত্ব অন্যের উপর চাপিয়ে দেয়,’যেমন আমি ” আর অধিকাংশ মানুষ অন্যের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে বাকি টা জীবন পার করে।কেউ অর্থ দিয়ে সেবা করে, কেউ মানবিকতা দিয়ে সেবা করে যেমন ” শেলী ” যায় হোক আজ এই বিষয়ে কথা বলব না।
হ্যাঁ ঘর-সংসার,আত্মীয় স্বজন সহ সবাই কে নিয়ে আল্লাহ্ রহমাতে অনেক ভালো আছি ।এখন সময় কাটে সংসার, সন্তান আর চারপাশ নিয়ে। বয়সের বেশির ভাগ সময় পার করে ফেলেছি। আজ যেন অন্যের জন্য বেঁচে আছি। এখন জীবনের অনেক চাওয়া পাওয়া অপরিহার্য বলে মনে হয় না। কখনো কখনো মনে হয়,আসলে প্রয়োজন নেই বা থাক চলছে তো। এভাবেই দিন পার হয়ে যাচ্ছে। আজ কাল বেশি বাইরে যাওয়া হয় না। কারণ জীবনে চলার পথে একটু একটু করে বাঁধা আসতে শুরু করছে।জীবন থেমে থেমে চলছে।অসুস্থতা জায়গা করে নিয়েছে আমার বা আমাদের জীবনে।
এটা প্রায় সবার জীবনের গল্প
কারো বেশি আর কারো অল্প,
বেঁচে থাকার অদম্য সেই চেষ্টা
আমি পাই না খুঁজে এর শেষ টা।
এই জীবনে অনেক কিছুই যত্ন সহকারে আগলে রেখেছি আর আজ ও কিছু জিনিস আগলে রাখি অত্যন্ত প্রয়োজনে।জীবনেরএই পর্যায় এসে বলতে ইচ্ছে করছে,অসহায়ের মতো লালন করি কিছু উপদেশ,কিছু নিয়ম কানুন। হ্যাঁ বলছি বিভিন্ন ডাক্তারের প্রেস্কিপশন ,কিছু কিছু রিপোট আর সে গুলি যত্নে রাখার জন্য কিছু ফাইল। আমি বলি ”কষ্টে ফাইল ”।
এখন অনেক সুন্দর কে সরিয়ে ডাক্তারের ফাইল,রিপোর্ট গুলি সাজিয়ে রাখি।কারণ কখন কোনটি প্রয়োজন হবে আমি নিজে ও জানি না। প্রিয় জনের জন্য বেঁচে থাকার সংগ্রামে এক মাত্র সঙ্গী আজ ”এই কষ্টের ফাইল ” গুলি। কখনো যার জন্য অপেক্ষা বা বাইনা করিনি। সে গুলিই বিচারণ করে মস্তিষ্কে। কাছের কারো বিয়োগ কল্পনা করতে পারি না। সবাই মিলে অল্প সুখে থাকার জন্য প্রতি নিয়ত লড়াই করে যাচ্ছি।কখনো জীবনের সাথে, কখনো মনের সাথে,আজ আর পারি না। আমি বড়ই ক্লান্ত,অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি আমার ”কষ্টের ফাইলের ” দিকে।
ভুল ত্রুটি ক্ষমার সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আপনাদের অনুপ্রেরণা আমাকে উৎসাও আর সাহস দিয়েছে।ধন্যবাদ।
”সমাপ্ত”

সর্বশেষ সংবাদ পেতে চোখ রাখুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সব ধরনের সংবাদ
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধনকৃত পত্রিকা। © All rights reserved © 2018-2024 Haworbarta.com
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Jp Host BD
jphostbd-2281