শেখ একেএম জাকারিয়া
নার্স শব্দের বাংলা অর্থ সেবিকা। এর সহজবোধ্য সংজ্ঞা প্রদান করা খুব জটিল। হাসপাতালে চাকুরির সূত্রে নার্স সম্পর্কে আমি যা বুঝি তা হলো এইরকম— মৃত্যুর সময় যারা আমাদের পাশে থাকেন, জন্মের সময়ও যারা আমাদের পাশে থাকেন, যাদের কারণে আমরা জন্ম বিষয়টিকে উদ্যাপন করি অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে, মৃত্যুর সময়েও যাদের নিকট থেকে সান্ত্বনা পাই, আপনি বা আমি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেই যারা সার্বক্ষণিক সেবা দিয়ে থাকেন তারাই হলেন নার্স।’
আমি পেশায় একজন মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট। চিকিৎসা সেবার সঙ্গে ওতোপপ্রোতো যুক্ত। তাদের-ই একজন সহযোদ্ধা। তাই মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট জাতির পক্ষ থেকে পৃথিবীর সব নার্সদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাই নার্স দিবসে।
আজ ১২ মে, আন্তর্জাতিক নার্স দিবস [Nurses Day]। মানবহিতৈষী Florence Nightingale -এর জন্মবার্ষিকী। পৃথিবীব্যাপী সব নার্সদের সম্মান জানাতে এই দিনটিকে নির্বাচন করা হয়েছে। নার্সদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও ত্যাগের জন্য এ দিনেই তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। দিনটি মূলত উদ্যাপিত হয় ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের কথা স্মরণ করে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘আমাদের নার্স, আমাদের ভবিষ্যৎ।’
এই বিশেষ দিনটি ‘আন্তর্জাতিক নার্স কাউন্সিল’ দ্বারা নির্বাচিত হয়েছিল এবং ১৯৭৪ সাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে পালিত হয়ে আসছে। এ বিশেষ দিনের অনুপ্রেরণা হচ্ছে-ব্রিটিশ নার্স ও সমাজ সংস্কারক ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল, যিনি স্বাস্থ্যক্ষেত্রে উন্নতির জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। মানব দরদী ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল তার এক কথায়/ ভাষণে বলেছিলেন,’আমি আমার এই সাফল্যকে সম্মান করি; আমি কোনো অজুহাত দিইনি বা নিইনি।’
নার্স সম্পর্কে বিভিন্ন মনিষীদের জ্ঞানগর্ভ উক্তি রয়েছে যা মনকে মোহিত করে। ক্রিস্টিনা ফিস্ট হেইলমেয়ার নার্সদের সম্পর্কে বলেন,’যত্ন, সেবা বা সাহায্য করার ইচ্ছার কারণে প্রত্যেক নার্স নার্সিংয়ের প্রতি আকৃষ্ট হন।’ আরেকটি উক্তি আছে,
কে বলেছিলেন নাম জানা যায়নি। যেমন, একটি জীবন বাঁচান এবং আপনি একজন নায়ক, একশটি জীবন বাঁচান এবং আপনি একজন নার্স। ডোনা উইল্ক কার্ডিলো নার্স সম্পর্কে বলেন, ‘নার্সরা স্বাস্থ্যসেবার হৃদয়।’ টেরি গুইলেমেটস বলেন, ‘একজন নার্স সবসময় আমাদের আশা দেবে স্টেথোস্কোপসহ একজন দেবদূত’ হিসেবে। নার্সিং পেশা নিয়ে এমন অনেক গুরুত্বপূর্ণ উক্তি বা কথা আছে যা আমাদের মনকে প্রশান্তিতে ভরে দেয়।
বইপত্রাদি ঘেঁটে জানা যায়, ১৯৫৩ সালে, আমেরিকার স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কল্যাণ বিভাগের কর্মকর্তা ডরোথি সাদারল্যান্ড অক্টোবরে ‘নার্স দিবস’ ঘোষণার জন্য সেই সময়ের প্রেসিডেন্টের কাছে একটি প্রস্তাব করেছিলেন। দুখের কথা, প্রস্তাবটি অনুমোদিত হয়নি। পরবর্তীতে ফ্রান্সেস পি. বোল্টন, ওহায়ও থেকে কংগ্রেসে নির্বাচিত প্রথম মহিলা, যিনি জাতীয় নার্স সপ্তাহের জন্য একটি বিলও পেশ করেছিলেন। এরপর অনেকদিন অতিবাহিত হয়।
প্রায় ২০ বছর পরে অর্থাৎ ১৯৭৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে, প্রেসিডেন্ট নিক্সন প্রত্যেক বছর ৬ মে থেকে ১২ মে পর্যন্ত ‘জাতীয় নার্স সপ্তাহ’ ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে ১২ মে ‘নার্স দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি পেতে শুরু করে। বর্তমানে পৃথিবীর অনেক হাসপাতালে ৬ মে থেকে ১২ মে পর্যন্ত ‘আন্তর্জাতিক নার্স সপ্তাহ’ পালন করা হয় এবং এর একটি অংশ হিসেবে যোগাসন সেশন, সেমিনার, ওয়েবিনার, প্রচার অভিযান, মজাদার খেলাসহ বিভিন্নভাবে উদ্যাপন চলে। আমাদের সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালেও প্রতিবছর ১২ মে আন্তর্জাতিক নার্স দিবস ঘটা করে পালিত হয়।
পরিশেষে এটুকুই বলা, নার্সিং পেশা একটি মহৎ পেশা। মানুষের সেবা করার গুরুত্বপূর্ণ একটা মাধ্যম।
কাজটিও অনেক আনন্দের। এ পেশায় সব শ্রেণীর মানুষের সেবা করার সুযোগ মিলে। এ দায়িত্ব সব মানুষের ভাগ্যে জুটে না। তাই নার্সদের প্রতি অনুরোধ থাকবে তারা যেন রোগীদের প্রতি শত ব্যস্ততায়ও শোভন আচরণ করেন।
একজন নার্স সর্বদা চিকিৎসকের বিভিন্ন কাজের সহযোগী হিসেবে হাসপাতাল কিংবা ক্লিনিকের আউটডোর, ইনডোর ও অপারেশন থিয়েটারে কাজ করে থাকেন। তা ছাড়া রোগীকে ওষুধ খেতে সহায়তা করাসহ বিভিন্নভাবে সেবা করারও কাজ করতে হয়। তাই নার্সদের প্রতি খারাপ আচরণ করা কারোর উচিত নয়। আমাদের সবসময় একটা কথা মাথায় রাখতে হবে যে, একজন নার্স শুধু সেবিকায় নন, একজন দেবদূতও বটে। তাদের প্রতি সবসময় ভালোবাসা ও সম্মান প্রদর্শন করা উচিৎ
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাউছার উদ্দিন সুমন
নির্বাহী সম্পাদক: আনিছুর রহমান পলাশ
বার্তা সম্পাদক: শহিদুল ইসলাম রেদুয়ান
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: নুরুল হক, শহিদ মিয়া