সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ০৯:৩০ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ

সামাদ আজাদ হাওড় জনপদের “কীংবদন্তি মহাপুরুষ”

হাওড় বার্তা ডেস্ক
  • সংবাদ প্রকাশ বৃহস্পতিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২২
  • ১৪৩ বার পড়া হয়েছে

খন অনেক ছোট। রাজনীতি বা সমাজ নীতি সম্পর্কে তেমন পরিস্কার ধারণা নেই। তবে কৈশোর অবস্থায় গ্রামের পাড়া-মহল্লার চাচা, বড়দের কাছ থেকে যে গল্প শুনতাম তা থেকেই “নেতা” শব্দের সাথে পরিচয়। আর যাকে ঘিরে লোক মুখে ফুলঝুরি হতো তিনি “সামাদ সাব” মানে প্রয়াত জাতীয় নেতা আব্দুস সামাদ আজাদের নাম। 

কি দাপুটে রাজনীতিবিদ। এমন একজন নেতাকে প্রথম দেখি পাগলা বাজার ডাক বাংলোতে। বড় একটি সমাবেশ। দিনক্ষণ সঠিক মনে নেই। বাবার সাথে বাজারে আসা আর বিশাল সমাবেশ জনতার তিলধারণের ঠাঁই নেই। দূর থেকে বাবা আমাকে উঁচু করে উঠিয়ে দেখালেন, উনি সামাদ সাব!

সময় যত যায় উনার সম্পের্ক জানাশোনা বাড়ে। পড়ে একাধিকবার আমাদের গ্রামসহ বিভিন্নখানে দেখেছি প্রয়াত এই নেতাকে। আমাদের গ্রামে আওয়ামীলীগ তথাপি আব্দুস সামাদ আজাদের শক্তিশালী কর্মী সমর্থক নেতাকর্মী ছিলো। সময়ের পরিক্রমায় যদিও এখন অনেকেই স্রোতে গা ভাসিয়েছেন।

বলে রাখি, আমি কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শ অনুসরণ করি না। কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে সরাসরি যোগাযোগ নেই। সামনে থাকবে কিনা অনিশ্চিত। গণমাধ্যমকর্মী সকল রাজনৈতিক দল এবং জেলা – উপজেলার রাজনীতিবিদদের সাথে ভালো সম্পর্ক রয়েছে।

আজকের নিবন্ধ প্রয়াত জাতীয় নেতা বাংলাদেশের প্রথম পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদের ১৭ তম মৃত্যুবার্ষিকী স্মরণে উৎসর্গ করলাম।

ইতিহাস ঘাটাঘাটি ও বয়োবৃদ্ধ নেতাকর্মী কাছ থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান থেকে দুয়েক কথা তুলে ধরছি।

বর্নাঢ্য এই রাজনীতিবিদের জীবন ইনিংস দীর্ঘ ৮৩ বছর (১৫ জানুয়ারি ১৯২২ – ২৭ এপ্রিল ২০০৫)।

ছিলেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, প্রবাসী সরকারের রাষ্ট্রদূত হিসেবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে ব্যাপক জনমত গড়ে তোলে ছিলেন তিনি। প্রাক্তন এমপি, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ৫ম সংসদের বিরোধী দলীয় উপনেতার দায়িত্বও পালন করেন তিনি।

১৯৪০ সালে সামাদ আজাদ সুনামগঞ্জ মহকুমা মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি হিসাবে ছাত্র রাজনীতিতে পদার্পণ করেন। তিনি ঐতিহ্যবাহী সুনামগঞ্জ সরকারী জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষাঙ্গন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন ও ইতিহাস বিষয়ে তিনি এম এ পাশ করেন। ছাত্র অবস্থায় ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে সক্রীয় থাকার কারণে সরকার তার এম এ ডিগ্রি কেড়ে নেয়। ১৯৪৪-৪৮ সাল পর্যন্ত তিনি সিলেট জেলা মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি ছিলেন। ভাষা আন্দোলনে তাঁর ভূমিকা ছিলো। আন্দোলনে যে কজন অগ্রগামী নেতা ছিলেন সামাদ আজাদ ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম।

১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের সময় কারাবরণ করেন। ১৯৫৩ সালে তৎকালিন পূর্ব পাকিস্তান যুব লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের মনোনীত প্রার্থী হিসাবে তৎকালীন প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়ে রাজনীতিতে আসেন। ১৯৫৫ থেকে ১৯৫৭ সাল পর্যন্তপূর্বপাকিস্তান (বাংলাদেশ) আওয়ামীলীগের শ্রম সম্পাদকের দায়িত্বপালন করেন।

১৯৫৬ সালে সমগ্র পূর্ব পাকিস্তান ধর্মঘটে নেতৃত্ব দেয়ায় পাক সাময়িক সরকার পুনরায় তাকে আটক করে কারাগারে পাঠায়। ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খানের সামরিক শাসন জারীর পর তিনি আবার গ্রেফতার হন এবং ৪ বছর কারাভোগ করে ১৯৬২ সালে মুক্তিলাভ করেন। ১৯৬৪ সালে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক সৃষ্টষড়যন্ত্রমূলক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সাহসিকতার সাথে মোকাবিলা করতে গিয়ে কারারূদ্ধহন।

১৯৭০ সালে তৎকালীন পাকিস্তানের গণপরিষদের সদস্যনির্বাচিত হন তিনি। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালের সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের মনোনয়নে তিনি সুনামগঞ্জ জেলার ২ ও ৩নং আসন জগন্নাথপুর-দক্ষিণ সুনামগঞ্জ-৩ আসন এবং দিরাই-শালা-ধর্মপাশা ও জামালগঞ্জ-২, দুটি আসনে নির্বাচন করে সংসদ সদস্যনির্বাচিত হন। এর আগে ১৯৭১ সালে মুজিবনগর সরকার (স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার) প্রতিষ্ঠাতা নেতাদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। তিনি মুজিবনগর সরকারের রাজনৈতিক উপদেষ্টা (পূর্ণমন্ত্রীর মর্যাদা) এবং ভ্রাম্যমাণ রাষ্ট্রদূত ছিলেন। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে সামাদ আজাদ বাংলাদেশের প্রথম পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বপান। ১৯৭১ সালের হাঙ্গেরি বুদাষ্টেবিশ্বশান্তিসম্মেলনে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন এবং বিশ্ববর্ণবৈষম্যকমিটির চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। ৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।

১৯৯১ সালের নির্বাচনে সুনামগঞ্জ-৩ আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয়উপনেতার দায়িত্বপালন করেন। ১৯৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনে একই আসন থেকে সাংসদ নির্বাচিত হয়ে আওয়ামীলীগ সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বপুনরায় পান। ২০০১ সালের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একই দলের মনোনয়নে সংসদ সদস্যনির্বাচিত হন। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে তিনি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসাবে দায়িত্বপালন করেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্বে ছিলেন।

উল্লেখিত আলোচনা ইতিহাস থেকে জানা। অবাদ তথ্যপ্রযুক্তির যুগে যে কেউ সহজে জেনে নিতে পারেন। এদিকে আর না এগিয়ে প্রয়াত নেতা সম্পর্কে উপলব্ধি থেকে যা বলতে চাচ্ছি। স্বাধীনতা পূর্ব ও উত্তর সময়ে অবহেলিত জনপদ সুনামগঞ্জকে যে ব্যক্তিটি তুলে ধরেছেন। অজপাড়াগাঁ থেকে দেশের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় আসীন হয়ে বঞ্চিত নিপিড়ীত মানুষের প্রতিনিধি হয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন সময়ে পরিক্রমায় তাঁকে যেনো ভুলে গেছি আমরা। হোক রাজনৈতিক সমাজ কিংবা সাধারণ। পোড়খাওয়া এই রাজনীতিবিদের অবদান ভুলে গেছি। ভুলে গেছি বাঙ্গালী জাতিসত্তায় তাঁর অবদানের ইতিহাস। সেই সময়কার ভঙ্গুর অর্থনীতিতে তাঁর উন্নয়নের কথা।

আজ সুসময়ের আর্শীবাদপুষ্ট হয়ে কেউ কেউ নিজেকে রাজাধিরাজ ভাবছেন। মনে করছেন এ তল্লাটে কে আর আছে?

সময় অবস্থানের পরিবর্তন হবে এটাই স্বাভাবিক। তবে নিজেকে জাহির করতে গিয়ে ইতিহাস ধামাচাপা দেয়া অবান্তর চেষ্টা। যা কখনোই কাম্য নয়।

সুখবর এটি সামাদপুত্র আজিজুস সামাদ ডন কেন্দ্রে স্থান পেয়েছেন। কেন্দ্রীয় নেতা আর জাতীয় নেতার স্থলাভিষিক্ত হিসেবে যেকোনো সময় চমক দেখাতেই পারেন। এটি অবাস্তব নয়। কেননা এই হাওর জনপদে সামাদ আজাদের নাম ঘরে ঘরে। এখনো তাঁর বিশাল অনুরাগী, কর্মী সমর্থক রয়েছে।

সর্বশেষে বলবো আব্দুস সামাদ আজাদ বাংলাদেশের ইতিহাসের অংশ। এমন একজন মানুষকে নিয়ে নতুন প্রজন্মের আমি একজন গর্ব করতেই পারি। তাঁর সৃষ্ট কর্ম অনুসরণীয় অনুকরণীয়। যাঁকে চিনে বিশ্ববাসী। হাওর জনপদের কীংবদন্তি মহাপুরুষ। প্রয়াত এই নেতার প্রতি রইলো বিনম্র শ্রদ্ধা।

 

লেখকঃ শহীদনূর আহমেদ 

সুনামগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি RTv ও নাট্যকর্মী।

সর্বশেষ সংবাদ পেতে চোখ রাখুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সব ধরনের সংবাদ
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধনকৃত পত্রিকা। © All rights reserved © 2018-2024 Haworbarta.com
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Jp Host BD
jphostbd-2281