শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০১:২৩ অপরাহ্ন

তালায় লকডাউনে বন্ধ নেই এনজিওর কিস্তি আদায়-হাওড় বার্তা 

বি এম বাবলুর রহমান
  • সংবাদ প্রকাশ বৃহস্পতিবার, ২৪ জুন, ২০২১
  • ১৬৬ বার পড়া হয়েছে

বিশেষ প্রতিনিধি

তালায় করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউন চলাকালে বিপাকে দরিদ্র ও নিম্নআয়ের মানুষ। তার উপর কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন এনজিও কর্মীরা কিস্তি আদায়ে,থেমে নেই কোন এনজিও কর্মীর কিস্তি আদায়।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এর ঘোষণা কৃত জেলার সকল উপজেলা সমূহে চলমান করোনা সংক্রমণ এড়াতে কঠোর পাশাপাশি সকল এনজিও প্রতি কিস্তি আদায়ের ক্ষেত্রে, গ্রাহকদের প্রতি কোন বাধ্যবাধকতা না রাখার নির্দেশ প্রদান করেন। কিন্তু কে শোনে গরিব বাঁচানোর কথা। কিস্তি আদায় বন্ধ থাকলেও তা মানছেন না সাতক্ষীরার তালার এনজিওকর্মীরা। লকডাউনের মধ্যে সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে কিস্তি আদায়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন তারা। ফলে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের ঋণ গ্রহীতারা। ঋণের কিস্তি দিতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।
জানা যায়, জেলার তালা উপজেলায় বিভিন্ন এলাকার ছোটোখাট ব্যবসায়ীরা এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে তাদের ব্যবসার কার্যক্রম চালান। এ ছাড়াও অনেকে এনজিও থেকে সাপ্তাহিক কিস্তিতে ঋণ নিয়ে ইজিবাইক, ভ্যান, মোটর ভ্যান, আলমসাধুসহ বিভিন্ন যানবাহন কিনে চালিয়ে তা থেকে আয় করে জীবিকা নির্বাহ করেন ও ঋণের কিস্তি দেন। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার পর থেকে ধীরে ধীরে সাতক্ষীরা জেলা সহ তালা উপজেলায় মৃত্যু ও আক্রান্তের হার বাড়তে থাকায় সরকার জেলা প্রশাসক সাতক্ষীরা জেলা লকডাউন ঘোষণা করেন এবং স্হানীয় সরকার নির্বাচন বন্ধ করে দেওয়া হয়। একই সাথে সীমান্ত জেলার অন্যতম তালা উপজেলার হওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ সাতক্ষীরা আঞ্চলিক ভিত্তিতে কঠোর লকডাউনের তালা উপজেলা।
জেলাব্যাপী করোনায় ২য় দফায় তৃতীয় মেয়াদে বর্ধিত এ লকডাউনের সময়সীমা রয়েছে আজ ২৪ জুন রাত ১২টা পর্যন্ত। তবে যে হারে প্রতিদিন তালা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় করোনা সংক্রমণ ছড়াচ্ছে তাতে করে ২৪ জুনের পরও লকডাউন অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে জেলা প্রশাসনের একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

দীর্ঘদিন চলমান লকডাউনের কারণে উপজেলার বেশির ভাগ মানুষ কর্মহারা হয়ে বর্তমানে অভাব অনটনে দিন কাটাচ্ছে। বন্ধ হয়ে গেছে ব্যবসা বাণিজ্য ও দৈনন্দিন আয় রোজগার। এমন পরিস্থিতিতে স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবার পরিজনদের মুখে দুই বেলা দু-মুঠো খাবার তুলে দিতেই হিমশিম খাচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষ। এ অবস্থার মধ্যেও তারা এনজিওর ঋণের কিস্তি দিতে গিয়ে পড়েছেন চরম বিপাকে।
তালা উপজেলায় ঋণ কার্যক্রম চালানো এনজিওগুলো বর্তমানে সর্বোচ্চ মাত্রায় ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা ও নিয়মিত কিস্তি আদায় করছে। এ ছাড়া সমাজসেবা ও সমবায় অধিদফতর থেকে নিবন্ধন নিয়ে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা আরো এনজিও নামক কসাই খানা। বেআইনিভাবে করোনাকালেও লকডাউন উপেক্ষা করে চড়া সুদে ঋণের কিস্তি আদায়ের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
এ দিকে গত ১০ জুন লকডাউন চলাকালীন ক্ষুদ্র ঋণের কিস্তি আদায় না করার জন্য নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডি থেকে এনজিও কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে একটি পোস্ট দেন সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল। অথচ জেলা প্রশাসকের সেই অনুরোধকে দুর্বলতা ভেবে তা মানছে না এনজিওগুলো। এমনকি জেলা প্রশাসনের বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে প্রতিদিন সকাল থেকে তালা উপজেলার প্রত্যেকটি অলিগলির বাড়ি বাড়ি গিয়ে কিস্তি আদায় করে চলেছেন এনজিওর মাঠকর্মীরা।
আর এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়ি ঘুরে বেড়ানোয় ঋণ গ্রহীতা পরিবারগুলোর পাশাপাশি এসব এনজিওর কর্মীরাও মহামারী করোনা সংক্রমণ ছড়ানোর তীব্র ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানান দেশের সর্বোচ্চ এনজিও ব্র্যাক ও অন্য এনজিওর একাধিক এনজিও কর্মীরা। এনজিও কর্মীরা আরো বলেন অফিসের চাপের মুখে পড়ে বাইরে আসতে হচ্ছে করোনার এমন দুঃসময়ে উপজেলার ভুক্তভোগী খেটেখাওয়া ঋণগ্রহীতারা যখন তাদের সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন, তখন এনজিওকর্মীরা (আমরা) বাড়ি বাড়ি কিস্তি আদায়ের জন্য ধন্না দিচ্ছি, কি ভাবে তারা কিস্তি দিবে কেউ গালিগালাজ করছে,কেউ পালাচ্ছে,কেও কাঁদছে আমরা পড়েগেছি মহা বিপাকে।

উপজেলার পাঠকের ঘাটার ইজিবাইক চালক, শফিকুল ইসলাম,টিকারাম গ্রামের পরিতোষ কুমার তালা উপজেলা সদরের আব্দুল কাদের সহ ভুক্তভোগী ঋণ গ্রহীতারা বলেন, আমরা বিভিন্ন সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা ও ছোটোখাট গাড়ি কিনে তা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহসহ ঋণের কিস্তি দিয়ে আসছি। কিন্তু করোনাকালীন লকডাউনে ব্যবসা বাণিজ্য প্রায় পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সংসার চালাতেই হিমশিম খাচ্ছি। লকডাউনে কয়েক সপ্তাহ বাড়ি বসে আছি, কোনো আয়-রোজগার নেই। ধার দেনা করে সংসার চলছে, কিস্তি কিভাবে দেবো ভেবে পাচ্ছি না। লকডাউনের সময় কিস্তি বন্ধ না করলে আমাদের না খেয়ে মরতে হবে।

কিস্তি আদায় বিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা ব্র্যাক এনজিওর সম্মনয়কারী মোঃ আশরাফুল ইসলাম সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে বলেন আমরা নিজেরাই স্বাস্থ্য বিধি মেনে কর্মীদের কাজ করতে বলেছি,জোর করে কিস্তি আদায় করতে নিষেধ করা হয়েছে,যদি কোন কর্মী অতি উৎসাহী হয়ে কিস্তি আদায় করতে জবরদস্তি করে তারা কিছু জানে না। বলেন, জেলা প্রশাসকের ফেসবুক থেকে দেয়া ঋণ আদায় না করা সংক্রান্ত পোস্টটি ১০ দিনেও আমরা দেখছি। কর্মীদের ঝুঁকি এড়াতে তাদের স্বাস্হ্য বিধি মেনে কাজ করতে বলা হয়েছে।
করোনাকালে জোরপূর্বক ঋণের কিস্তি আদায় না করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তারপরও যারা স্বেচ্ছায় কিস্তি দিতে ইচ্ছুক তাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করছি মোবাইল ফোনে ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে কিস্তি আদায় করছি।

তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার তারিফ -উল হাসান বলেন, লকডাউনে কিস্তি আদায় না করার জন্য আমি আগামীকাল উপজেলার সকল এনজিও দের সাথে মিটিং আহ্বান করা হয়েছে আমি তাদের কিস্তি আদায় বন্ধ রাখতে ও করোনা কারিনা সময়ের বিষয়টি বিবেচনা করার বিষয়ে আলোচনা করবো । এ ব্যাপারে এনজিওদের সাথে মিটিং শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

সর্বশেষ সংবাদ পেতে চোখ রাখুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সব ধরনের সংবাদ
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধনকৃত পত্রিকা। © All rights reserved © 2018-2024 Haworbarta.com
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Jp Host BD
jphostbd-2281