বিশ্বনাথ (সিলেট) প্রতিনিধি
সিলেটের বিশ্বনাথে দিন দিন বাড়ছে আত্মহত্যার প্রবণতা। তুচ্ছ কারণ, প্রেম ও পারিবারিক কলহসহ বিভিন্ন কারণে আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছেন হতাশাগ্রস্ত মানুষ। এ তালিকায় শুধু বড়রা নয়, আছে শিশু-কিশোরাও। পুলিশের তথ্য বলছে, চলতি মাসের মাত্র ১৩ দিনের ব্যবধানে ৬ টি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে।
বর্তমানে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। মাদক, প্রেমে ব্যর্থতা, পারিবারিক কলহ, অতিরিক্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষার কারণে তরুণ-তরুণীরা বেশি হারে আত্মহত্যা করছেন।
আবার কেউ কেউ চালিয়েছেন আত্মহননের ব্যর্থ চেষ্টা। হঠাৎ করে এমন আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে যাওয়াকে উদ্বেগজনক বলছেন সচেতন মহল।
পুলিশ সূত্র জানায়, সর্বশেষ গত ১৯ আগস্ট দুপুরে ভাইবোনদের সাখে খাবার নিয়ে ঝগড়ার এক পর্যায়ে মায়ের বকুনিতে অভিমানে বিষপান করে ১৬ বছর বয়সী কিশোরী হাফিজা বেগম তানিয়া। সে উপজেলার দেওকলস ইউনিয়নের দূর্যাকাপন গ্রামের দিলশাদ মিয়ার মেয়ে।
তাৎক্ষণিক সিলেট ওসমানী হাসপাতালে নেয়া হলে ওখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় সে। এর আগে দিন ১৮ আগস্ট নিজ শয়ন কক্ষের ছাদে ব্যবহৃত বাঁশের সাথে ওড়না ও পর্দা দিয়ে ফাঁস নেন প্রিয়াংকা দেবনাথ সঞ্জি নামের ২২ বছরের যুবতী। তিনি অলংকারী ইউনিয়নের রামাইচক রহিমপুর গ্রামের নরোত্তম দেবনাথের মেয়ে। ওইদিন সন্ধ্যা রাতে পরিবারের সকলের অগোচরে ফাঁস নেন তিনি।
খবর পেয়ে তার নিথর দেহ উদ্ধার করে ওসমানী মেডিকেলের মর্গে পাঠায় পুুলিশ। তবে তার আত্মহত্যার সঠিক কারণ জানাতে পারেনি কেউ।
গত ১৬ তারিখ বিষপানে আত্মহত্যা করেন উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের দশপাইকা গ্রামের আবদুল মনাফের স্ত্রী রাফিয়া বেগম (৫০)। পরিবারের দাবী, দীর্ঘদিন ধনে ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন তিনি। ওইদিন দুপুর দেড়টায় পান করেন কীটনাশক।
পরে হাসপাতালে নেয়া হলেও প্রাণ রক্ষা হয়নি তার। ১৩ আগস্ট বড় ভাইয়ের সাথে অভিমান করে বিষপানে আত্মহত্যা করে উপজেলার দশঘর ইউনিয়নের বাউসী গ্রামের শিশু রিয়া বেগম (১৩)। সে গ্রামের আবদুল কাদিরের মেয়ে। ঘটনার দিন বিকেল সাড়ে তিনটায় কীটনাশক পান করে রিয়া। পরে একদিন চিকিৎসা নেয়ার পর হাসপাতালেই মৃত্যুরকোলে ঢলে পড়ে সে।
১২ আগস্ট মধ্যরাতে শয়নকক্ষের জানালার সাথে গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেন একই ইউনিয়নের মান্দারুকা গ্রামের মৃত লুুৎফুর রহমান বলাইয়ের ছেলে শামীম আহমদ মাহি (২৭)। পরদিন পুলিশের সহায়তায় ঘরের দরজা ভেঙে তার নিথর দেহ উদ্ধার করা হলেও আত্মহনণের কারণ জানা যায়নি।
এরআগে গেল ৫ আগস্ট প্রেমিকার সাথে অভিমান করে বিষপান করেন উপজেলার খাজাঞ্চী ইউনিয়নের চন্দ্রগ্রামের মৃত আঞ্জব আলীর ছেলে জিল্লুর রহমান (২১)। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনিও।
‘বাতিঘর’র সাবেক সভাপতি গোলাম মোস্তফা বলেন, এর পেছনে দায়ী সামাজিক বৈষম্য, হতাশা, পারিবারিক কলহ, ভার্চুয়াল দুনিয়া ও মাদকের আগ্রাসন।
এ বিষয়ে বিশ্বনাথ পুলিশ স্টেশনের অফিসার ইন-চার্জ গাজী আতাউর রহমান বলেন, আত্মহনন শেষ সমাধান নয়। এটি রোধে সচেতনতার বিকল্প নেই। তবে, এ কাজে কেউ প্ররোচনা দিলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে বলে তিনি জানান।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাউছার উদ্দিন সুমন
নির্বাহী সম্পাদক: আনিছুর রহমান পলাশ
বার্তা সম্পাদক: শহিদুল ইসলাম রেদুয়ান