শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৩:৩৯ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ
মদিনা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস পালিতবরিশালে জর্জ কোর্ট চেম্বারের মধ্যে স্ত্রীকে কুপিয়ে রক্তাক্তসুনামগঞ্জে সাবেক সংসদ সদস্য ও বীর মুক্তিযোদ্ধা নজির হোসেনের জানাযা অনুষ্ঠিতনাসিরনগরে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালিত।চৌহালীতে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান স্বাধীনতা দিবস পালন।দোয়ারাবাজারে ট্রাকচাপায় ৪ বছরের শিশু নিহত। শান্তিগঞ্জে গণহত্যা দিবস উপলক্ষে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও আলোচনা সভা। সুনামগঞ্জে পানি সংকটে হাজারো পরিবার: নলকূপে উঠছে না পানি-!!সামর্থ্য অনুযায়ী গরীব ও দুঃস্থদের পাশে দাড়ান- পলিন। সুনামগঞ্জের ফ্লাওয়ার লেকে ছুটছেন দর্শনার্থীরা।

জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আমিনে’র ২য় মৃত্যুবার্ষিকী আজ। -হাওড় বার্তা 

এম.ইব্রাহিম বিন আশ্রাফী
  • সংবাদ প্রকাশ বুধবার, ৩০ জুন, ২০২১
  • ৬৯৬ বার পড়া হয়েছে

স্টাফ রিপোর্টারঃ

‘‘এমন জীবন তুমি করিবে গঠন/মরিলে হাসিবে তুমি কাদিঁবে ভুবন।’’- কবির এই কথাটাকে সত্য করে সহস্রাধিক মানুষের মনে ঠাঁই করে নিয়েছেন,তিনি আর কেউ নয়-দক্ষিণ খুরমা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান,ছাতক-দোয়ারা জনপ্রতিনিধি পরিষদের সভাপতি,ছাতক উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার,আওয়ামীলীগ নেতা,মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আমিন।

১৯৫৪ সালের ১ এপ্রিল সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার দক্ষিণ খুরমা ইউনিয়নের চৌকা গ্রামের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন জাতির এ শ্রেষ্ঠ সন্তান।বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ জুন পরলোকগমন করেছেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আমিন ছোটবেলা থেকেই খুব সাহসি প্রকৃতির ছিলেন। তাঁর শরীর স্বাস্থ্যও ছিল মোটামুটি ভালো।তিনি সাবেক একজন কৃতি ফুটবলার ছিলেন।তিনি খুব স্পষ্টভাষী ব্যক্তি ছিলেন,কালোকে কালো আর সাদাকে সাদা বলার দুঃসাহসিক গুণে গুণান্বিত ছিলেন।তৃণমূলে আওয়ামীলীগকে সুসংগঠিত করতে অক্লান্ত
পরিশ্রম করে গেছেন।কর্মগুণে তিনি সবার জনপ্রিয়তা অর্জন করতে সক্ষম হন।তিনি দক্ষিণ খুরমা ইউনিয়ন পরিষদের ১৯৯৮-২০০৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত অত্যন্ত সৎ ও নিষ্টার সাথে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে গেছেন।এবং ইউনিয়নের ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করে গেছেন।নুরুল আমিন কোন কাজে হেরে যাননি। সব সময় সকল কাজে জয়ী হয়েছেন। তিনি সবার কাছে প্রিয় ছিলেন। তাঁর সহজ সরল চালচলন মিষ্টি ব্যবহার মানুষের মনকে মুগ্ধ করেছিল।‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম’- কালজয়ী এই ভাষণ শুনে তার শরীরের শিরায় উপশিরায় রক্ত টগবগিয়ে উঠে।তিনি দেশ মাতৃকাকে ভালোবেসে, বঙ্গবন্ধুর কালজয়ী ভাষণে অনুপ্রানিত হয়ে মুক্তিকামী মানুষের কথা ভেবে, পাকিস্তানীদের বৈষম্য হতে দেশকে মুক্ত করতে, জাতির পিতার আদেশে মোঃ নুরুল আমিন মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।

‘এখন যৌবন যার, যুদ্ধে যাবার শেষ্ঠ সময় তাঁঁর’- সারা পৃথিবী কাপানো উচ্চ কন্ঠের এই কাবিতাটি মাতৃভুমি প্রেমিক অনেক ছাত্রনেতাসহ সাধারণ মানুষকে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণে ধাবিত করার জন্য প্রেরণা যুগিয়েছিল। মুক্তিকামী মানুষকে সঠিক নেতৃত্ব দিয়ে জন্মভূমিকে পাকিস্তান শাসক গোষ্ঠীর কবল থেকে রক্ষার জন্য প্রথমে একমাস গেরিলা ট্রেনিং করেন। প্রশিক্ষণ শেষে নিজের জীবন বাজি রেখে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।দীর্ঘ ৯ মাস রণাাঙ্গনে মরণপণ যুদ্ধ করে ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসে সূর্য উদয়ের সাথে নিজের জন্মস্থান ছাতকে এসে পৌছান নুরুল আমিনসহ সকল যোদ্ধারা।এলাকার মানুষ পুরো অঞ্চলে জয় বাংলার শ্লোগানে মুখরিত করে তুলেন।সকল মানুষের শ্রদ্ধা আর ভালবাসায় সিক্ত হন সকল মুক্তিযোদ্ধারা।স্বাধীন দেশে বাতাসের পত পত করে উড়তে থাকে দেশের লাল সবুজের পতাকা। যা মা-বোনের ইজ্জত সম্ভম ও লাখো শহীদের লাল রক্তের বিনিময়ে পাওয়া।

তিনি বিবাহিত জীবনে ৪ কন্যা ও ১ পুত্র সন্তানের গর্বিত বাবা।তিনি দাম্পত্য জীবনে ছিলেন একজন
সুখী মানুষ।তিনি ছাত্রজীবন থেকেই রাজনৈতিক কর্মী ও একজন রাজনৈতিক যুদ্ধা ছিলেন।ছাতকে
আওয়ামীলীগের রাজনীতি সুসংগঠিত করার মধ্য দিয়ে তিনি কাজ করে গেছেন অত্যন্ত নিরলস
ভাবে।যা বর্তমানে রাজনীতিদের কাছে উদাহরণ স্বরূপ।কাজের ফাঁকে অবসরে তিনি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্টানের বিজয় দিবসসহ নানা অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে যোগদান করতেন। এলাকার সবাই তাকে অতিথির আসনে পেয়ে গর্বিত হতো। তিনি দেশাত্ববোধক গান বেশি পছন্দ করতেন। স্কুলের ছোট ছোট বাচ্চাদের মুখে দেশের গান
শুনলে তিনি অতীতে ফিরে যেতেন। এক দৃষ্টিতে পতাকার দিকে তাকিয়ে থাকতেন। এমনকি
বাচ্চাদের সাথে তিনিও ঠোঁট মিলিয়ে গান
গাইতেন।‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে/বাংলার আকাশে
রক্তিম সূর্য আনলে যারা/ তোমাদের এই ঋণ কোন দিন শোধ হবেনা। না-না-না শোধ হবে না/মৃত্যুর মুখোমুখি দাড়িয়ে/ সাতকোটি মানুষের জীবনের সন্ধান আনলে যারা/ সে দানের মহিমা/ কোন দিন শেষ হবেনা/ না-না-না শেষ হবে না।’
এছাড়াও তিনি বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, সমাজ সেবামূলক সংগঠন বিভিন্ন দায়িত্ব দক্ষতার সহিত পালন করেছেন।

মহান আল্লাহ তায়ালার ডাকে সাড়া দেন তিনি। চিকিৎসকদের সকল চেষ্টা ব্যর্থ করে অবশেষে ৩০ জুন ২০১৯ইং খ্রিষ্টাব্দে তিনি ইন্তেকাল করেন। দেশ ও দেশের বাইরের অগণিত শুভাকাঙ্খিদের শোকের সাগরে ভাসিয়ে না ফেরার দেশে চলে যান তিনি।তাঁর মৃত্যুতে পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছিল। বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আমিনের মৃত্যু সংবাদ যে যেখানেই শুনেছেন সেখান থেকে ক্ষণিকের জন্য হলেও তাকে এক নজর দেখার জন্য সবাই ছুটে এসেছিলেন।সেদিন
উপস্থিত সকলের চোখ অশ্রুতে ভরা ছিল,সকলের
মুখে ব্যথার কালো ছায়া। সব কিছু যেন থমকে গেছিল সেদিন তাঁর মৃত্যুতে। তাঁকে যথাযথ রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদর্শনপুর্বক এবং এলাকাবাসীর ভালোবাসায় সমাহিত করা হয়।

জন্ম নিলে মৃত্যু হবে এটা চিরন্তন সত্য। কিন্তু ক্ষণিকের এই পৃথিবীতে মানুষ বেঁচে থাকে তার আপন কীর্তি দিয়ে। পৃথিবীর সৃষ্টি থেকে আল্লাহ প্রদত্ত কিছু কিছু মানুষ দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করে নিজেকে পুড়িয়ে সমাজকে আলোকিত
করেছেন। এই এক দৃষ্টান্ত ইতিহাসের পাতায় পাতায় স্বর্ণ অক্ষরে লেখা থাকবে তাঁর নাম। জাতির বুকে লাল সবুজের পতাকায় অমর হয়ে রইবেন বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আমিন।আর চির অম্লান হয়ে তিনি মানুষের অন্তরে থাকবেন সারাজীবন। যার ঋণ কখনোই পরিশোধের নয়।তিনি চির ভাস্কর।

সর্বশেষ সংবাদ পেতে চোখ রাখুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সব ধরনের সংবাদ
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধনকৃত পত্রিকা। © All rights reserved © 2018-2024 Haworbarta.com
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Jp Host BD
jphostbd-2281