মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৩৭ অপরাহ্ন

বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন যারা- মাহমুদুল হাসান। 

আবু খালেদ
  • সংবাদ প্রকাশ শুক্রবার, ১ এপ্রিল, ২০২২
  • ১৯২ বার পড়া হয়েছে

 বিশেষ প্রতিনিধি শান্তিগঞ্জ।

স্কুল কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্পণ শিক্ষা জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘটনা। বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞান তৈরি ও প্রয়োগের যায়গা। শিক্ষা জীবন পরবর্তী সময় কিভাবে অতিবাহিত হবে তা অনেকাংশেই বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের উপর নির্ভর করে। সেই জন্য নবাগত শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্পণের পরবর্তী সময়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিকে নজর দিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে নতুনদের এইসব বিষয় তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া টেক গবেষণা প্রতিষ্ঠানে পিএইচডি গবেষক হিসেবে কাজ করা ও সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুল হাসান।

এই জিনিসটা আরো প্রকট বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, বিজ্ঞান বিষয়ের একজন ছাত্র বা শিক্ষক কিভাবে সাহিত্যের উপরে বিজ্ঞানকে বসানো যায়, কিংবা বাণিজ্যের একজন শিক্ষক কিভাবে বিবিএ/এমবিএ ডিগ্রিকে সবার উপর প্রতিষ্ঠা করা যায়- সেই তর্কে ব্যস্ত থাকেন। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি বিভ্রান্তিতে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে সদ্য ভর্তি হওয়া প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা।

অনেক ঝড়-ঝাপটার পর একটি বিষয় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শুরু করার পর তাদের মনের ভিতর ঢুকিয়ে দেয়া হয় বিভিন্ন প্রশ্ন- এই বিষয় পড়ে কি হবে? ঐ বিষয় পেলে হয়তো আমি সহজে চাকরি পেতাম। এই বিষয় কি আমাদের দেশের জন্য উপযোগী?

অনেকসময় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের তথাকথিত বড় ভাইয়েরা শিক্ষার্থীদের শেষ পেরেকটি ঠুকে দেয়। হয়তো নিজের পড়াশুনার খবর নেই, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের জ্ঞান দিতে অথবা নিজের বিভাগ নিয়ে বিষদগার করতে তাদের কোন প্রাতিষ্ঠানিক বা অপ্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রয়োজন পরে না। কিছু থিওরি স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাদের মাথায় তৈরি থাকে নতুন প্রজন্ম কে বিভ্রান্ত করার জন্য।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন কোন বিভাগ বা অনুষদ খোলা হয় না, যা কিনা সমাজ, দেশ বা মানব সভ্যতার জন্য প্রয়োজন নেই। বিজ্ঞানী আইনস্টাইন কে একবার জিজ্ঞাস করা হয়েছিল আপনি যদি বিজ্ঞানী না হতেন তাহলে কি হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি ছিল? তার কাছ থেকে উত্তর এসেছিল, ‘আমি হয়তো পিয়ানো বাজাতাম’।

আপনি সারাদিন গবেষণাগারে কাজ করে হয়তো চাইবেন সন্ধ্যায় থিয়েটারে যেতে। এই থিয়েটার- নাটক এসব নিয়ে হয়তো কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস হচ্ছে। মিলিয়ন ডলারের নতুন কোন প্রজেক্টের মিটিং শেষে আপনার হয়তো ইচ্ছে হবে ভাল কোন ডায়েট খাবার নিতে। ভবিষ্যতে এই সুষম বা ডায়েট খাবার নিয়ে কেউ হয়তো কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে গবেষণা করছে।

রোহিঙ্গা ইস্যু বা জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে হয়তো কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের আজ সেমিনার হচ্ছে, আবার এইসব সভা-সেমিনার কে ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে নিয়ে আসতে হয়তো একসময় কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা হয়েছে বছরের পর বছর। আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজিন্স নিয়ে কাজ করা কোন তুখোড় ছাত্র বা গবেষক হয়তো খুঁজে বেড়াচ্ছে ভাষা শাস্ত্রের এমন কাউকে যে কিনা বাঙলায় নির্দেশনা দেয়া কোন রোবটের জন্য ভাষা-মনোবিজ্ঞানের ব্যাপারে সহয়াতা করতে পারে।

কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ হয়তো মানব সভ্যতার ইতিহাস ও ধর্মতত্ত্ব নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, আবার একই বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্র হয়তো প্রোগ্রামিং বিষয়ক আন্তর্জাতিক কোন প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয় ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় দুই বন্ধু হয়তো কাজ করছে আগামীর পৃথিবীর জন্য ‘ভার্টিক্যাল ফার্মিং প্রযুক্তি’ নিয়ে। মেডিক্যালের কোন শিক্ষার্থী হয়তো কোন পরিবহন প্রকৌশলী বা নগর পরিকল্পনাবিদের খোঁজ করছে, যান-জটের কারণে গাড়িতে বসে থাকাটা আমাদের কিডনি ক্ষয়ের কতটুকু কারণ সেই বিষয়ে গবেষণা করার জন্য। কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের একজন শিক্ষকের গবেষণার উপর হয়তো বাংলাদেশের সবগুলো নদী নিয়ে একটি ডাটাবেইজ অনলাইনে সবার জন্য উন্মুক্ত হয়েছে।

ইংরেজি ভাষাবিজ্ঞানের কিছু ছাত্রছাত্রী হয়তো বাংলাদেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় প্রচলিত ইংরেজি কারিকুলামের আধুনিক শিক্ষায় যথার্থতা নিয়ে গবেষণা করছে। ইলিশ মাছের গুণাগুণ ঠিক রেখে কিভাবে পুকুরে চাষ করা যায় কিংবা বাঙলার রয়েল বেঙ্গল টাইগার কে চায়নাদের পাণ্ডাদের মত ব্যাপক ভাবে কীভাবে ফিরিয়ে নিয়ে আসে যায়- এসব বিষয় নিয়ে হয়তো কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী তাদের আগামীকালের এসাইনমেন্ট তৈরিতে ব্যস্ত।

গল্পগুলো অনেকের কাছে কাল্পনিক মনে হতে পারে, কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে আমাদের দেশের বিভিন্ন বিষয়ের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া কিছু ছেলে মেয়ে নীরবে নিভৃতে এভাবেই শত চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। আর এসব শিক্ষার্থীরাই বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষে সফলতার দেখা পায়।

প্রশ্ন আসতে পারে- অমুক বিষয়ে ডিগ্রি নিয়ে আমি কি চাকুরীর বাজারে টিকে থাকতে পারব? চাকুরীর বাজার সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরুতে যে বিষয়ের চাকুরীর বাজার ভাল, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শেষে সে বিষয়ের চাকুরীর বাজার একই রকম নাও থাকতে পারে। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে অর্থনৈতিক মুক্তি অনেকসময় সর্বাধিক গুরুত্ব পেলেও শিক্ষার উদ্দেশ্য থেকে সরে আসাটা একটি জ্ঞান ভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের বড় অন্তরায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দিন থেকে ডিগ্রি প্রাপ্তির দিন পর্যন্ত একজন ছাত্রছাত্রীর চিন্তা, মনন ও জ্ঞানে কতটুকু পরিবর্তন হলো, ডিগ্রির প্রদানের চেয়ে এই বিষয়টি মুখ্য হওয়া সমীচীন। এই পরিবর্তন তাকে দ্রুত পরিবর্তনশীল এই পৃথিবীতে টিকে থাকতে সাহায্য করবে।

চাকরি-চাকরি করে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে অনেকে নিজেকে হারিয়ে ফেলছে, আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে জীবনের প্রথম কম্পিউটার কি-বোর্ডে হাত দেয়া ছেলে-মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষে প্রতিষ্ঠিতও হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় চত্তরে সময়গুলো বেশ দ্রুতই চলে যায়। বিশ্বায়নের এই যুগে হলিউডের টপচার্ট মেনে মুভি দেখা ছেলেটা যখন মিড-টার্ম পরীক্ষার জন্য ফটোকপি দোকানে খোঁজ নিবে,

বুঝতে হবে সে নিজের পরিবর্তনে এতটা গুরুত্ব দিচ্ছে না। যে কোন বিষয়ের উপর অনেক অনলাইন কোর্স এখন বিভিন্ন প্লাটফর্মে পাওয়া যায়। অজুহাত আর সিস্টেমের ভুল ধরে সময় ব্যয় না করে, নিজের পঠিত বিষয়কে ভালবেসে লেগে থাকলে সফলতা পাওয়াটা শুধু সময়ের ব্যাপার।

কথাগুলো অনেকের ভাল না লাগতে পারে, কিন্তু যারা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে পৃথিবীময় বিকশিত হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে, তাদেরকে আমাদের নিজেদের পাড়ি দেয়া ভুল পথে ঠেলে দেয়াটা অন্যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য শুভকামনা- তোমাদের পথচলা হোক জ্ঞানের অন্বেষণে একটি মুক্তচিন্তা, বৈষম্যহীন, জ্ঞান ভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের চেষ্টায়।

লেখক : মাহমুদুল হাসান পিএইচডি গবেষক, ভার্জিনিয়া টেক, যুক্তরাষ্ট্র ও সহকারী অধ্যাপক, বায়োটেকনোলজি ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদ, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।

সর্বশেষ সংবাদ পেতে চোখ রাখুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সব ধরনের সংবাদ
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধনকৃত পত্রিকা। © All rights reserved © 2018-2024 Haworbarta.com
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Jp Host BD
jphostbd-2281