হাওড় বার্তা
নিজেস্ব প্রতিবেদন : সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে বাঁধ ভেঙে টাঙ্গুয়ার হাওর তলিয়ে যাওয়ার ঘটনায় সংশ্লিষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) বিরুদ্ধে মামলা দেয়ার হুমকি দিয়েছে হাওর বাঁচাও আন্দোলন।
রোববার দুপুরে হাওর নিয়ে কাজ করা এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটির সুনামগঞ্জ জেলা শাখার মানববন্ধনে সংশ্লিষ্টরা একথা বলেন।
শহরের ট্রাফিক পয়েন্টে হয়ে যাওয়া মানববন্ধনে কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বিজন সেন রায় বলেন, ‘গত ২৮ মার্চ নজরখালী বাঁধে ফাটল দেখা দেয়ার বিষয়টি আমরা সঙ্গে সঙ্গে তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করেছি। এর পাঁচ দিন পর বাঁধ ভেঙে হাওর তলিয়ে গেল, প্রশাসন কী ভূমিকা নিয়েছে তা প্রশ্নবিদ্ধ।
‘হাওর ডুবে যাওয়ার পর পাউবোর (পানি উন্নয়ন বোর্ডের) নির্বাহী প্রকৌশলীর আচরণ ছিল সন্দেহজনক। তারা অস্বীকার করছেন এ বাঁধ তাদের না। তাহলে প্রশ্ন রাখলাম, এ বাঁধে যে ৯ লাখ টাকা দেয়া হলো এটা কি সরকারের না পাউবো নির্বাহী প্রকৌশলীর ব্যক্তিগত?’
হাওর ডোবার দায় কাবিটা স্কিম বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটির উল্লেখ করে বিজন সেন বলেন, ‘যাদের স্বাক্ষরে পিআইসিকে টাকা দেয়া হয়েছে এবং যে পিআইসি এ বাঁধের কাজ করেছে তাদের সবাইকে আসামি করে মামলা দেয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখনও বাঁধের শতভাগ কাজ শেষ হয়নি। এর জন্য দায়ী কারা? কেন কাজ শেষ করা হয়নি? এসব এখন খুঁজে বের করতে হবে। বাঁধ ভেঙে আর হাওর ডুবে গেলে সুনামগঞ্জ পাউবো ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও করা হবে। হাওর ডোবার সব দায় তাদের নিতে হবে।’
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির জেলা কমিটির সহসভাপতি আলী হায়দার, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল হক মিলন, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রমেন্দ্র কুমার দে মিন্টু, বিকাশ রঞ্জন চৌধুরী ভানু, সহসভাপতি চিত্তরঞ্জন তালুকদারসহ অন্য সদস্যরা।
উজানের পানির চাপে তাহিরপুর উপজেলার নজরখালী বাঁধ ভেঙে শনিবার সকাল থেকে পানি ঢুকতে শুরু করেছে হাওরে। এতে ফসলহানির শঙ্কা প্রকাশ করেছেন কৃষকরা।
তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা বলেছেন, ভেঙে যাওয়া বাঁধটি ফসল রক্ষার জন্য করা হয়নি। এটি ভাঙলেও ফসলহানির শঙ্কা নেই।
ডিসেম্বরের ১৫ তারিখ থেকে শুরু হয় এই বাঁধের কাজ, যা ২৮ ফেব্রুয়ারি শেষ হওয়ার কথা। প্রতি বছরই এই বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম ও দীর্ঘসূত্রতার অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।
পাউবো কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছর ১২৪টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) মাধ্যমে ৫৩২ দশমিক ৩৯ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭২৪ কোটি টাকা।
এর আগে সর্বশেষ ২০১৭ সালে অকাল বন্যায় বাঁধ ভেঙে তলিয়ে যায় হাওরের বোরো ফসল।
পাউবোর সুনামগঞ্জ জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নজরখালী বাঁধ নির্মাণের জন্য এবার ৯ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় পাউবো।
তবে পাউবো কর্মকর্তারা বলছেন, এই বাঁধটি ফসল রক্ষার জন্য নয়, এলাকাবাসীর অনুরোধে বিশেষ বরাদ্দের মাধ্যমে নির্মিত হয়েছিল।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শামসুদ্দোহা বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওর রামসার সাইট (আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ জলাভূমি) ঘোষণার পর থেকে এখানে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হয় না। মৎস্য অভয়ারণ্য এই হাওরে ধান চাষও হয় না। তবে হাওরের কিছু ভাঙা অংশ ছিল তাই এলাকাবাসীর অনুরোধে বিশেষ বরাদ্দের মাধ্যমে এখানে বাঁধ নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাউছার উদ্দিন সুমন
নির্বাহী সম্পাদক: আনিছুর রহমান পলাশ
বার্তা সম্পাদক: শহিদুল ইসলাম রেদুয়ান
সাব এডিটর: আবু তাহের, আফতাব উদ্দিন।