সাতক্ষীরা জেলা প্রতিনিধি
দেশ এখন করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারনে মহাবির্যয়,আর এই বিপর্যয় রোধে চাই জাতীয় ঐক্য এমনটাই বলেছেন সাতক্ষীরার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট – ইয়াছমিন নাহার।
সাতক্ষীরা চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইয়াছমিন নাহার তার অনুভূতিতে সারাবিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে এমনটাই ব্যাক্ত করে বলেছেন,,,,,,,,,,
বিশ্ব যখন এগিয়ে চলেছে, আমরা তখনও বসে-বিবি তালাকের ফতোয়া খুঁজেছি, ফিকাহ ও হাদিস চষে’- জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতার চরণ দু’টি কেন উল্লেখ করলাম, তা নিয়ে মনে প্রশ্ন জাগতে পারে। এই লাইন দুটো উল্লেখ করার কারণ আমাদের দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট। ভাইরাল হওয়া কোন কিছু নিয়ে লিখতে আমার বরাবরই অপছন্দ কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমাদের আচরণ সত্যিই লজ্জাজনক। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে আমাদের জন জীবন বিপর্যস্ত। যারা হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরছেন, আইসিইউতে আছেন তারা যেমন জীবনের এক মহা যুদ্ধে লিপ্ত আছেন ঠিক তেমনি এই লকডাউনে যারা খেটে খাওয়া মানুষ আছেন, কর্ম হারিয়ে পরিবারে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের সরবরাহে হিমশিম খেয়ে জড়িয়ে পড়েছেন আরেক রকমের জীবন যুদ্ধে। এই যখন আমাদের অবস্থা, জীবন যখন জীবন ও জীবিকার টানাপোড়নে বিপর্যস্ত ঠিক তখনই আমি বড় না তুমি বড়? আমি ঠিক না তুমি ঠিক-এই হিসাব নিকাশ সত্যিই জাতির প্রতি, জনগণের প্রতি নিষ্ঠুর বিদ্রুপ ছাড়া আর কিছুই না। এই প্রসঙ্গে মনে পড়ে গেল, ছোটবেলায় পড়া হরিশচন্দ্র মিত্রের কবিতা- ‘আপনারে বড় বলে, বড় সেই নয়, লোকে যারে বড় বলে, বড় সেই হয়’। আমার মনে আছে ছোটবেলায় মায়ের সাথে অভিমান করে বলতাম, তুমি আমাকে না বরং আপুকে ভালোবাসো। আমার স্বল্পশিক্ষিত মা হেসে বলতেন, রান্না করতে গেলে শুধু লবণ হলেই হয় না, মরিচ তেল এসবও লাগে আবার শুধু মরিচ হলেই হয় না, লবণও লাগে। আর এসব মিলেই যেমন ভালো রান্না হয় ঠিক তেমনি পরিবারে সবার গুরুত্ব ঠিক সেই লবণ, মরিচের মতো। কাউকে ছাড়া কাউকেই চলে না, সবাই মিলেই পরিবার। পরিবার হচ্ছে জাতীয় জীবনেত ক্ষুদ্র সমষ্ঠি মাত্র। সুতরাং পরিবারের ক্ষেত্রে যেমন লবণ মরিচের সূত্র চলে, আমি মনে করি জাতীয় জীবনেও লবণ মরিচের সূত্রও সমভাবে কার্যকর। কারণ একটা রাষ্ট্র চালাতে গেলে এর সবগুলো অঙ্গের মাঝে অবশ্যই সুসম্পর্ক, সুসমন্বয় এবং সামঞ্জস্য থাকতে হবে, না হলে সৃষ্টি হবে চরম অরাজকতা। আমরা সবাই ঈশপের গল্প পড়েছি সেই যে পেট কাজ করে না বলে হাত আর পায়ের ব্যাপক অভিযোগ ছিল এবং তারা বিদ্রোহ ঘোষণা করলো। তখন সুযোগ বুঝে পেট কাজ করা বন্ধ করে দিল, এরপর দেখা গেল হাত, পা তাদের চলৎশক্তি হারিয়ে ফেলেছে এবং তখনই বুঝতে পারলো চোখে দেখা না গেলেও পেট আসলে স্থবির থাকেও না সেও ঠিকই তার কাজ করে যায়। এভাবেই বলা যায় এই যে দেশ নামের বিশাল পরিসরের বিরাট দেহ কাঠামোর কাজ চলছে, এটা সম্ভব হচ্ছে তার সকল অঙ্গের নিরন্তর কাজ করে যাওয়ার কারণেই। এখানে কারো নিজেকে বড় আর কাউকে ছোট করে দেখার উপায় নেই। সবাই যার যার জায়গা থেকেই কাজ করছে বলেই দেশ চলছে, জনগণ সুচারুরূপে জীবন যাপন করতে পারছে। আর দেশ যখন সুশৃঙ্খলভাবে চলবে না, তখন বুঝতে হবে এর সকল অঙ্গই কম বেশি এর জন্য দায়ী। তারা সঠিকভাবে নিজের কাজ নিয়ম মেনে করছে না বলেই এই দূর্যোগ, এই বিপর্যয়। বিপদে বিপথে যাওয়া কখনোই কাম্য না। বিপদে একে অপরের হাত শক্ত করে ধরে সামনে এগিয়ে যেতে হবে, বিপদ থেকে মুক্ত হওয়ার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাতে হবে। করোনা ঠিক তেমনি এক বৈশ্বিক বিপদ, দূর্যোগ এবং চরম বিপর্যয়। এই মুহূর্তে প্রয়োজন সামষ্টিক উদ্যোগ, কাজের সমন্বয় আর সামঞ্জস্য। দিশাহীন নাবিকের মতো এই মুহূর্তে পথভ্রষ্ট হওয়া যাবে না, জাতীয় ঐক্যের ভীষণ প্রয়োজন। কবি কামিনী রায়ের কবিতার লাইন দুটো দিয়ে শেষ করবো-‘আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে আসে নাই কেহ অবনী পরে, সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে আমরা পরের তরে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাউছার উদ্দিন সুমন
নির্বাহী সম্পাদক: আনিছুর রহমান পলাশ
বার্তা সম্পাদক: শহিদুল ইসলাম রেদুয়ান