শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৪৪ পূর্বাহ্ন

ছাতকে প্রভাবশালী পরিবার কতৃক নিরিহ আত্বীয়র জমি জবর দখল হুমকি দমকি ভয়ভীতি প্রদর্শন অব্যাহত \ চোরাগুপ্তা হামলার অভিযোগ

হাসান আহমদ
  • সংবাদ প্রকাশ সোমবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২১
  • ৯৬১ বার পড়া হয়েছে

ছাতক (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি

সুনামগঞ্জের ছাতকে একটি প্রভাবশালী পরিবার কতৃক নিরিহ নিকট আত্বীয়ের ভূমি জবরদখলের অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার দক্ষিন খুরমা ইউনিয়নের ছেগাপাড়া গ্রামের পুরানবাড়ী সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, ছেগাপাড়া গ্রামের মৃত. তবারক আলীর ছেলে রহিদ আলী গংদের সাথে একই গ্রামের মৃত. ছন্দু মিয়ার ছেলে আব্দুল কুদ্দুছ ও আব্দুছ ছোবহানদের দীর্ঘদিন ধরে জমি সংক্রান্ত বিরোধ চলে আসছে। আব্দুছ ছোবহান ও রহিদ আলি সম্পর্কে একে অপরের মামা-ভাগিনা হয়।

গত বুধবার (১৫ সেপ্টম্বর) আব্দুছ ছোবহান ও তার অন্যান্য সহযোগীরা রহিদ আলী গংদের মৌরশী ভূমিতে জোরপূবূক ধানের চারা রোপন করতে গেলে বাঁধা প্রদান করেন রহিদ আলী গংরা। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করে। পরে স্থানীয়রা বিষয়টি আপোষ মিমাংশা করে দিবেন আশ্বস্থ্য করা হলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ সালিশ বসার আগেই পরদিন বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টম্বর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আব্দুছ ছোবহান ও তার সহযোগীরা দেশীও অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে পূর্ণরায় ঘটনাস্থল জমিতে ধানের চারা রোপন করতে যান। এতে রহিদ আলী গংরা বাঁধা প্রদান করলে ফের উত্তেজনা দেখা দেয়। একপর্যায়ে আব্দুছ ছোবহান ও তার সহযোগীরা মারমুখি হয়ে হুমকি-দমকিসহ ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। রহিদ আলী গংরা অসহায় হয়ে বাড়িতে ফিরে গেলে তাদের মৌরশী ভূমি জবরদখল ও এতে ধানের চারা রোপন করেন আব্দুছ ছোবহান ও তার সহযোগীরা। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পুরান বাড়ীর সামনে রহিদ আলির চাচাত ভাই সিএনজি চালক মছদ্দর আলীর উপর চোরাগুপ্তা হামলা করেন প্রতিপক্ষের লোকজন এমন অভিযোগও উঠেছে।

রহিদ আলী গংদের এ জমিসহ আরো বিভিন্ন জায়গা প্রতিপক্ষের লোকজন কতৃক জোরপূর্বক জবর দখলের পায়তারা করার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এ বিষয়ে একাধিক সালিশ বৈঠকও হয়েছে। সর্বশেষ আ.লীগ নেতা আওলাদ আলী রেজার সভাপতিত্বে তার নিজ বাড়ীতে উভয়পক্ষের উপস্থিতিতে সালিশ বৈঠক অনুষ্টিত হয়। এ বৈঠকেও কোন সুরাহ হয়নি বলে জানা গেছে।

জোরপূর্বক জমি দখলের পায়তারা করার ঘটনায় রহিদ আলী বাদী হয়ে গত ২৮ জুলাই ছাতক থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ছাতক থানা পুলিশ। এছাড়াও অতিরিক্ত ম্যাজিষ্ট্রিট আদালত, সুনামগঞ্জ বিবিধ মোকদ্দমা নং-৭৮/২০২১ ইং(ছাতক) দায়ের করা হয়।

ভূক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ আব্দুছ ছোবহান ও তার অন্যান্য সহযোগীরা আইন ও সালিশ কিছুই তুয়াক্কা করছেনা। এর আগে অথাৎ গত বছর গ্রামের পাশে একটি ডোবা সেচ করে মাছ ধরতে যান রহিদ আলী ও তার ভাই। এ সময় অতর্কিতভাবে হামলা করেন প্রতিপক্ষের লোকজন। এর পর প্রতিপক্ষের লোকজন পরিকল্পিত ভাবে দরজা বিহীন ভাঙা ঘরে মদ রেখে দিয়ে রহিদ আলীকে ফাঁসানো হয়। প্রতিপক্ষের অব্যাহত হুমকি দমকি ও ষড়যন্ত্র সব কিছু জমি জবর দখলের পায়তারার অংশ এ দাবি ভুক্তভোগী পরিবারের।

জেএল নং-২৯২ খতিয়ান নং-১৪৫ মোজা-ভূইগাঁও, দাগ নং-১৭৯৫ ইহাতে ৫৩ শতক ভূূমির এসএ রেকর্ডিও মালিক ছেগাপাড়া গ্রামের মৃত. মুহাম্মদ কাজিম এর ছেলে মৃত. শেখ ময়না, মৃত. চন্দু আলী, একই গ্রামের মৃত. রাশিদ আলির ছেলে মৃত. কোবাদ আলী, মৃত. মুহাম্মদ কাজিমের ছেলে মৃত. সাজিদ আলি। মৃত. শেখ ময়নার ছেলে তবারক আলী মারা যাওয়ার পর তার উত্তরাধিকারী ভিত্তিতে মালিক হন তফজুল আলী, মফľুল আলী, ওয়াহিদ আলী, রহিদ আলী। বিগত ২৬.০৭.২০০৫ ইং তারিখে ৩৮৮৫ নং দলিল মুলে তফজ্জুল আলী, মফজ্জুল আলী, ওয়াহিদ আলী ও রহিদ আলী ৮শতাংশ জায়গা বিক্রি করেন প্রতিপক্ষ আব্দুল কুদ্দুছ ও আব্দুছ ছোবহানের নিকট। ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ সেই সময়ে ওয়াহিদ আলী ও রহিদ আলীর বয়স ১৪ থেকে ১৫ বছর ছিল। তাদের স্বাক্ষি দেওয়ার কথা বলে কৌশলে এ দলিল সম্পাদন করেন প্রতিপক্ষের লোকজন। ঐ দলিলে আরো দুই দাগে ৩২ শতাংশ জায়গা পরিকল্পিত ভাবে কৌশলে লিখিয়ে নেয় প্রতিপক্ষ আব্দুল কুদ্দুছ, আব্দুছ ছোবহান ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ। অপরদিকে মৃত. রাশিদ আলির ছেলে কোবাদ আলী মারা যাওয়ার পর ১৭৯৫ দাগে তার উত্তরাধিকার ভিত্তিতে মালিক হয় হারিছ আলী, ওয়ারিছ আলী, গুলবাহার গং, মৃত. মুহাম্মদ কাজিমের ছেলে সাজিদ আলি মারা যাওয়ার পর উত্তরাধিকার ভিত্তিতে মালিক হয় আসকির আলি। ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ এই ভূমিও জবর দখল করে নিয়েছে প্রতিপক্ষের লোকজন।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী মছদ্দর আলি বলেন, তাদের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে উঠেছি। প্রসাশনের হস্তক্ষেপ কামনা করি। মফজ্জুল আলি বলেন, আমাদের জমি জোরপূর্বক জবরদখল করা হয়েছে। আমার ভাই রহিদ আলিকে দরজা বিহীন ভাঙা ঘরে মদ রেখে ফাঁসানো হয়। আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি। রহিদ আলি বলেন, স্বাক্ষি দেওয়ার কথা বলে একটি দলিল সম্পাদন করা হয়। পরে জানতে পারি আমাদের অনেক জমি লিখে নিয়ে গেছে। তখন আমরা দুই ভাইয়ের বয়স ১৪ থেকে ১৫ বছর ছিল।

এ বিষয়ে ছাতক থানার এ এসআই মিজানুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শনের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, সেই সময়ে যে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছিল এতে দাগ নাম্বার ভুল ছিল। সংশোধন করে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলাম। আর তারা যোগাযোগ করে নাই।

এ বিষয়ে অভিযোক্ত আব্দুল ছুফান এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তার উপর আনিত সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, রহিদ আলি আমার আপন ভাগীনা হয়। আমার ভাই লন্ডন প্রবাসী আব্দুল কদ্দুছের মেয়ে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল তারা। কিন্ত মেয়ের সাথে ছেলের মিল হবেনা বিদায় এ সম্পর্কে আমরা রাজি হইনি। এক প্রশ্ননের জবাবে তিনি বলেন, আ.লীগ নেতা আওলাদ আলী রেজা বিষয়টি ধামা চাপা দিয়েছিলেন। কিন্ত শেষ হয়েও হয়নি।

দক্ষিন খুরমা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মছব্বির এর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে মুঠোফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

ছাতক থানার ওসি শেখ নাজিম উদ্দিন বলেন, বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে দেখছি।##

সর্বশেষ সংবাদ পেতে চোখ রাখুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সব ধরনের সংবাদ
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধনকৃত পত্রিকা। © All rights reserved © 2018-2024 Haworbarta.com
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Jp Host BD
jphostbd-2281