বিশেষ প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে ১৫ বছর বয়সী পিতৃহীন এক কিশোরী ধর্ষণের ঘটনা অবশেষে ধামাচাঁপা পড়ে গেলো।
ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের বাঁশতলা এলাকায়। ঘটনার ১১দিনের মাথায় পুলিশের চাঁপে রোববার ওই কিশোরীকে থানায় হাজির করা হয়। ধর্ষকদের ভয়ে নির্যাতিতা ও তার পরিবার মামলা না করায় এলাকায় সমালোচনার ঝড় বইছে। বড় অংকের টাকার বিনিময়ে ধর্ষণের ঘটনা দফারফা করেছে পুলিশ ও কতিপয় গণমাধ্যম কর্মী এমনই অভিযোগ স্থানীয় এলাকাবাসীর। তবে পুলিশ বলছে, ভিগটিমের পক্ষে কোন অভিযোগ না পাওয়ায় মামলা না করে ওই কিশোরীকে চাচার জিম্মায় দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, ধর্ষণের আলামত নষ্ট করতে ঘটনার পর ওই কিশোরিকে ডাক্তারি পরিক্ষা-নিরিক্ষা না করেই আপন চাচার মাধ্যমে এক ধর্ষকের বড় ভাইয়ের কাছে রাজধানী ঢাকা তার বাসায় পাঠানো হয়েছিল। যাতে ভিকটিম ছাড়া থানায় কোন মামলা না হয়। তবে ধর্ষক লম্পটদের বাঁচানোর জন্য স্থানীয় একটি কু-চক্রি মহল ঘটনার শুরু থেকেই তৎপর ছিলো জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাবা-মা না থাকায় সে ওই কিশোরী চাচার বাড়িতে বসবাস করতো। গত ১০ এপ্রিল সন্ধ্যায় চাচা হানিফ মিয়ার সাথে রাগ করে স্থানীয় বাঘমারা বাজারে যায় বাংলাবাজার ইউনিয়নের বাঁশতলা কলোনির বাসিন্দা ওই কিশোরী। সাবেক ইউপি সদস্য আবুল কালামসহ বাজারে জড়ো হওয়া গন্যমান্য লোকজন কিশোরিকে তার বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য টমটম গাড়ির চালক আবদুল কদ্দুসকে দায়িত্ব দেন। এদিকে আবদুল কদ্দুস কিশোরিকে বাড়িতে পৌঁছে না নিয়ে সীমান্তের চিন্নিত চোরাকারবারি জুটন ভূইয়ার কাছে নিয়ে যায়। মধ্যরাতে কিশোরি মেয়েকে জোরপূর্বক মৌলারপাড় এলাকার আপনের টিলায় নিয়ে জুটনসহ ৩জন মিলে রাতভর পালাক্রমে ধর্ষণ করে। পরদিন ভোরে ওই কিশোরী ধর্ষকদের চোখ ফাকি দিয়ে পালিয়ে স্থানীয় সাবেক মেম্বার আবুল কালামের পাশের বাড়িতে গিয়ে ঘটনার বিবরণ তুলে ধরে। খবর পেয়ে স্থানীয় ৩জন গণমাধ্যম কর্মী কিশোরির কাছে এসে তার ভিডিও বক্তব্য ধারণ করেন। ধারনকৃত ভিডিও ওই বক্তব্যে কিশোরি মেয়েটিকে কারা কোথায় নিয়ে কি ভাবে ধর্ষণ করেছে সম্পূর্ণ বিষয়টি তুলে ধরে। এসময় সাবেক মেম্বার আবুল কালামও উপস্থিত ছিলেন। পরে ওই গণমাধ্যম কর্মীরা মোটরসাইকেল যোগে অসহায় ওই কিশোরিকে থানায় নিয়ে আসে। ততক্ষণে ধর্ষকরা খবর পেয়ে থানা পুলিশ ও গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে আলোচনা করে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে রফাদফা হয়। রহস্যজনক কারণে পুলিশ কোন প্রকার মামলা না নিয়ে কিংবা ডাক্তারি পরিক্ষা-নিরিক্ষা না করেই কৌশলে চাচার জিম্মায় মেয়েটিকে তুলে দেওয়া হয়। ধর্ষণের আলামত নষ্ট ও ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে চাচাকে ম্যানেজ করেই লম্পটরা কিশোরীকে অভিযুক্ত জুটন ভূইয়ার বড় ভাই বাবুল ভূইয়ার ঢাকার বাসায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
ঘটনাটি এলাকায় তোলপাড় শুরু হলে গত ১৭ এপ্রিল কিশোরির সন্ধানে সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাজন কুমার দাশ (অপরাধ), এএসপি রণজয় চন্দ্র মল্লিক (ছাতক সার্কেল), দোয়ারাবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বদরুল হাসান কিশোরীর বাড়িতে গিয়ে তাকে না পেয়ে পরদিন ১৮ এপ্রিল সকাল ১০টার মধ্যে কিশোরীকে থানায় উপস্থিত করার জন্য তার চাচা হানিয় মিয়াকে নির্দেশ দিয়ে আসেন পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তাগণ। কিন্তু ওইদিন কিশোরীকে থানায় উপস্থিত করা হয়নি। অবশেষে পুলিশের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ২১ এপ্রিল রোববার দোয়ারাবাজার থানায় কিশোরীকে হাজির করা হয়।
কিশেীর চাচা হানিফ মিয়া বলেন, তার ভাতিজি ঢাকা বাবুলের বাসায় ছিল। তাকে বিমানে সিলেট নিয়ে আসেন ধর্ষক জোটনের ভাই বাবুল। পরে তিনি তার ভাতিজিকে সিলেট থেকে দোয়ারাবাজার থানায় নিয়ে এসেছেন। তিনি আরও বলেন, ভাতিজির মাথা ঠিক নেই, সে একেক সময় একেক রকম কথাা বলে। এবিষয়ে তার মামলা করার ইচ্ছে নেই।
এদিকে, নিজের পূর্বের দেওয়া বক্তব্যে ধর্ষণের কথা স্বীকার করলেও সন্ত্রাসী প্রভাবশালীদের ভয়ে এখন ধর্ষণের চেষ্টার কথা বলছে ওই কিশোরি। সে থানায় উপস্থিত একাধিক সাংবাদিকদের জানায়, স্থানীয় ৩জন সাংবাদিক তাকে মোটর সাইকেল যোগে থানায় নিয়ে এসে ছিলেন। এরপর তাকে ঢাকায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বদরুল হাসান বলেন, কিশোরীর চাচা হানিফ মিয়ায় থানায় নিয়ে এসেছেন। তার পরিবার মামলা দিতে চাচ্ছে না। উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তার চাচার জিম্মায় কিশোরী দেওয়া হয়েছে।
এবিষয়ে সহকারী পুলিশ সুপার (ছাতক সার্কেল) রণজয় চন্দ্র মল্লিক বলেন, রোববার গভীর রাত পর্যন্ত কিশোরীর পরিবারকে মামলার জন্য বুজানো হয়েছে, কিশোরীর চাচা রাজি হয়নি। কি করবো আমরা নিরুপায় হয়ে কিশোরীর চাচার কাছে তাকে তুলে দেওয়া হয়েছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাউছার উদ্দিন সুমন
নির্বাহী সম্পাদক: আনিছুর রহমান পলাশ
বার্তা সম্পাদক: শহিদুল ইসলাম রেদুয়ান
সাব এডিটর: আবু তাহের, আফতাব উদ্দিন।