সুনামগঞ্জ জেলার পাঁচটি সরকারি হাইস্কুলের সবকয়টিতেই প্রশাসনিক পদ শূন্য। অর্থাৎ প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য। জেলা শহরের ঐতিহ্যবাহী দুইটি সরকারি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক নেই। দুইটি করে সহকারী প্রধান শিক্ষকের চারটি পদই শূন্য। এ কারণে বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়ছে।
সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ঐতিহ্যবাহী সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ে স্বাধীনতার পর অর্থাৎ গত প্রায় ৫০ বছরের মধ্যে ২৭ বছরই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ছিলেন। বেশিরভাগ সময় ছিলেন না সহকারী প্রধান শিক্ষকও।
সিলেট বিভাগের স্বনামধন্য এই বিদ্যালয়ে একজন সহকারী শিক্ষক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। তবে ভারপ্রাপ্ত এই প্রধান শিক্ষকও চাকুরিতে যোগ দিয়েছিলেন ১৯৯১ সালে। চারবছর আগেই তিনিও সহকারী প্রধান শিক্ষক হবার কথা ছিল। পদোন্নতি আটকে থাকায় সহকারী শিক্ষক হিসেবেই আগামী জুলাইয়ে পিআরএল’এ যাবেন এই সিনিয়র সহকারি শিক্ষক।
তিনি বলেন, পদোন্নতি হলে দায়িত্ব পালনে সুবিধা হতো। মানসিকভাবেও শান্তি পেতাম। শিক্ষকরা মনে করেন, উনিতো আমাদের মতোই সহকারী শিক্ষক।
সুনামগঞ্জের অন্য সরকারি হাইস্কুলের মধ্যে সরকারি সতীশ চন্দ্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, তাহিরপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, জগন্নাথপুর স্বরূপচন্দ্র সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, জগন্নাথপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়েও প্রধান ও সহকারি প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন জুনিয়র শিক্ষকেরা।
সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অভিভাবক অ্যাড. মাহবুবুল হাসান শাহীন বললেন, পূর্ণাঙ্গ প্রধান শিক্ষক দায়িত্বে না থাকলে বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দেয়। শিক্ষকরা যথা সময়ে ক্লাসে আসেন না। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সমস্যা হয়।
সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ে ২০২২ সালে কিছুদিনের জন্য প্রধান শিক্ষক ছিলেন মুন্সিগঞ্জের বাসিন্দা মো. মনসুর রহমান খান।
তিনি বলেন, সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে বদলি হয়ে যোগদানের দিন (২০২২ সালের ১৬ জুন) বিদ্যালয়ে মিলাদ মাহ্ফিল ছিল, আমি গিয়ে দেখলাম ৫০ জনের মতো শিক্ষার্থী উপস্থিত আছে। অথচ পরের বছর ১৬ শ’ শিক্ষার্থী অভিভাবকের আয়োজন ছিল। এ বছরও শুনেছি ভালো উপস্থিতি হয়েছে। দীর্ঘদিন প্রধান শিক্ষক না থাকলে অনেক কার্যক্রমই স্থবির হয়ে যায়। সাড়ে সাত টায় পাঠদান শুরুর কথা, ওখানে বিদ্যালয় খোলা হত আটটায়।
তিনি বললেন, সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকও জ্যেষ্ঠ শিক্ষক। উনার দুর্ভাগ্য উনি প্রমোশন পান নি। অন্য স্কুলগুলোয় আরও খারাপ অবস্থা। ২০০১ সালের পরে যোগদান করা শিক্ষকও আছেন যারা ভারপ্রাপ্ত হিসেবে প্রধান শিক্ষক, সহকারি প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। এভাবে চলে না বলে মন্তব্য করলেন তিনি।
সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শিক্ষাবিদ পরিমল কান্তি দে বলেন, সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি সতীশ চন্দ্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়সহ জেলার একটি সরকারি স্কুলেও প্রধান শিক্ষক না থাকার বিষয়টি উদ্বেগজনক। অন্যান্য শিক্ষকেরও পদ এসব স্কুলে শূন্য আছে। অবিলম্বে এসব পদ পূরণ করা প্রয়োজন। অন্যথায় শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হবে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের আঞ্চলিক উপপরিচালক আবু সাঈদ মো. আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, সুনামগঞ্জসহ সিলেট বিভাগের সরকারি মাধ্যমিক স্কুলগুলোর বেশির ভাগেই এ ধরণের সংকট বিরাজ করছে। সম্প্রতি আমরা শূন্য পদের তালিকা পাঠিয়েছি। দীর্ঘদিন হয় শিক্ষকদের প্রমোশন হচ্ছে না। প্রমোশন না হলে প্রধান শিক্ষক পাওয়া যাবে না। প্রমোশন দেওয়া যেমন জরুরি। সহকারি শিক্ষকের শূন্য পদেও নিয়োগ দেওয়া জরুরি। নিজ নিজ অঞ্চলের প্রধান শিক্ষক হলে ভালো হয়। দূরের কাউকে পদায়ন করলে, তদবির করে চলে যান। পরে আবারও পদ শূন্য হয়ে পড়ে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাউছার উদ্দিন সুমন
নির্বাহী সম্পাদক: আনিছুর রহমান পলাশ
বার্তা সম্পাদক: শহিদুল ইসলাম রেদুয়ান
সাব এডিটর: আবু তাহের, আফতাব উদ্দিন।