শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০১:২১ অপরাহ্ন

সুনামগঞ্জে বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটার রিচার্জ নিয়ে ভোগান্তিতে গ্রাহকরা।

হাওড় বার্তা ডেস্ক
  • সংবাদ প্রকাশ বৃহস্পতিবার, ২১ মার্চ, ২০২৪
  • ২৫৪ বার পড়া হয়েছে

নিজেস্ব প্রতিবেদক: ‘১১ টি সিরিজে ২২০ ডিজিটের টোকেন নম্বর, বুড়ো মানুষ, নম্বর না টিপলে অন্ধকারে থাকতে হবে ভয়ে রীতিমতো প্রস্তুতি নিয়ে টুলের উপর দাঁড়িয়ে যুদ্ধ শুরু করলাম। নম্বর টিপা শুরু করলে কয়েকবার মোবাইল স্কিনের পাওয়ার অফ হয়ে যায়, স্কিনে আলো এনে আবারও যুদ্ধ শুরু, ২২০ টি বুলেট একই লক্ষবস্তুতে ফেলা অতিশয় কঠিন, তাই ভুল হয়ে যায়, এক পর্যায়ে একটি সিরিজ শেষ করে সবুজ বোতামে চাপ দিলেই ফায়ার সার্ভিসের এ্যালার্মের মতো করে মিটারটি চিৎকার করতে শুরু করল। খেঁাজ নিয়ে জানলাম, এই সতর্ক সংকেতের অর্থ হলো মিটার লকড্ হয়ে গেছে। এখন বিদ্যুৎ অফিসে যেয়ে মিটার আনলক্ড করাতে হবে আগে, পরে আবার শুরু করতে হবে সেই একই যুদ্ধ।’

সুনামগঞ্জ শহরের নতুনপাড়া আবাসিক এলাকার বাসিন্দা কবি—সাংবাদিক কুমার সৌরভ মঙ্গলবার নিজের বাসার প্রিপেইড মিটারে টাকা রিচার্জের যন্ত্রণার কথা ফেসবুক আইডিতে লিখে দিয়ে, মন্তব্য করলেন, মানুষকে কঠিন বিড়ম্বনায় ফেলে আর যাই হোক, স্মার্টতো দূরের কথা ডিজিটাল দেশ গঠনই অমা—রাত্রিতে চাঁদ দেখার মতো কল্পনা বিলাস হবে।

কুমার সৌরভের এই ফেসবুক স্ট্যাটাস অসংখ্য ফেসবুক বন্ধু শেয়ার করেছেন। একইসঙ্গে নিজেদের বাড়ীর প্রিপেইড মিটারে টাকা রিচার্জের যন্ত্রণার কথা, কমেন্টে লিখে দিয়েছেন।

সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সুনামগঞ্জের সহ-সভাপতি সাংবাদিক আইনজীবী খলিল রহমান কমেন্টে লিখেন, চরম বিরক্তিকর, আমি একবার বিপাকে পড়ে বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মীকে এনে কাজটি করিয়েছি। ফাজলামু, সাধারণ মানুষের সঙ্গে তামাসা। যে চুরি বন্ধের জন্য এই মিটার, সেই সব চোরদের তো সরকার, বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা কোলে নিয়ে বসে থাকে।

লেখক সুখেন্দু সেন লিখেছেন, আমরা যারা অল্প বিস্তর লেখাপড়া শিখেছিলাম। এখন দেখছি স্মার্ট আর ডিজিটিাল বাংলাদেশের পাল্লায় পড়ে রাতারাতি অশিক্ষিত অকেজো হয়ে গেলাম।

ফেইসবুকে একজন লিখেছেন, আনকোরা লোকজন দিয়ে এসব কাজ চালানো হচ্ছে। তাই এতো বিড়ম্বনা। বড় বড় স্মার্ট স্যাররা একটু নজর দিলে আম পাবলিকের হয়রানি কমবে।

আরেকজন লিখেছেন, এটি বিদ্যুৎ বিভাগের চূড়ান্ত ফাতরামি। বর্তমান ডিজিটালযোগে এতো ডিজিট দিয়ে ছেলেখেলার প্রয়োজন নেই।

প্রিপেইড মিটারে এই যন্ত্রণা কবে দূর হবে জানতে বুধবার গিয়ে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডে যোগাযোগ করলে, বোর্ডের কনিষ্ঠ থেকে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের অনেকেই বললেন, ডিজিটাল যুগে এমন অফলাইন মিটারে গ্রাহক এতোটাই অতিষ্ঠ যে, আমাদেরকে প্রতিদিনই গালি শুনতে হয়। এমন যন্ত্রণা কোনভাবেই সইবার নয় বলে মন্তব্য করলেন তারাও।

বিদ্যুৎ বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, সুনামগঞ্জে কেবল পিডিবি’র—ই এ ধরনের মিটার আছে ২০ হাজার। বিদ্যুতের রেট বাড়ালে, কিংবা নতুন কোন চার্জ বা ফি দেবার নির্দেশনা থাকলেই, রিচার্জ করার সময় ১৮০ থেকে ২২০ ডিজিটের টোকেন নম্বর টিপতে হয়।

ওই কর্মকর্তা বললেন, ২০১৭ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সময়ে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে পুরোনো মিটার পরিবর্তন করে প্রায় ২০ হাজার এমন গ্রাহককে প্রিপেইড মিটার লাগিয়ে দেওয়া হয়।

চায়নার তৈরি পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করার জন্য করা এসব মিটার এভাবে লাগানো কোনভাবেই ঠিক হয় নি মন্তব্য করে এই কর্মকর্তা বললেন, সকলেই চায় স্মার্ট মিটার। যেখানে সিম থাকবে, ম্যাসেজ করলেই টাকা রিচার্জ হবে। অফলাইনের এসব মিটার এই ডিজিটাল যোগে কেন লাগানো হয়েছে, সে নিয়েও প্রশ্ন তুলেন এই কর্মকর্তা।

বিদ্যুৎ বিভাগের একাধিক কর্মচারী জানান, ২০২২ সালের পর থেকে বাধ্যতামূলক প্রোগ্রামেবল লজিক কন্ট্রোলার বা পিএলসি মিটার সুনামগঞ্জে লাগানো হলেও এগুলো সুনামগঞ্জে স্মার্ট মিটার হিসেবে কাজ করছে না। পাশের জেলা শহর সিলেটে এগুলো স্মার্ট মিটার হিসেবে কাজ করে।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু নুয়মান বললেন, ম্যাসেজ করলেই টাকা মিটারে রিচার্জ হয়, এমন মিটার ঢাকা—সিলেটসহ অনেক স্থানেই আছে। সুনামগঞ্জে সেটি হবে না। এটার জন্য আলাদা সাভার্র লাগে, যেটি এখানে নেই। আলাদা প্রকল্পের মাধ্যমে এটি করতে হবে। স্মার্ট মিটারকে পিডিবি’র সাভার্রের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। ২০১৭ সাল অফলাইনের প্রায় ২০ হাজার মিটার এখানে লাগানো হয়েছে, এগুলো কখনোই স্মার্ট মিটার হবে না বলে জানান এই প্রকৌশলী।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী (সিলেট অঞ্চল) আব্দুল কাদির বললেন, অফলাইনের মিটারের যন্ত্রণার কথা প্রতিদিনই শুনতে হয়। ১৮০—২২০ ডিজিট রিচার্জ করার কষ্টের কথা গ্রাহকরা আমাকেও জানান। এই বিষয়টি নিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের উর্ধ্বতনদের ভাবা উচিত বলে আমিও মনে করি। গণমাধ্যমসহ সংশ্লিষ্ট সকলকেই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত।

সর্বশেষ সংবাদ পেতে চোখ রাখুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সব ধরনের সংবাদ
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধনকৃত পত্রিকা। © All rights reserved © 2018-2024 Haworbarta.com
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Jp Host BD
jphostbd-2281