রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ১২:২০ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ
ইউএসএ বাংলা আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন-২০২৪ সম্পন্ন।সুনামগঞ্জে রিক্সা চালক ও হতদরিদ্রদের মধ্যে খাবার পানি ও স্যালাইন বিতরণ।সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির প্রবীণ নেতা ওয়াকিফুর রহমান আর নেই-!!ইউক্যালিপটাস গাছ পরিবেশের জন্য হুমকি। সিলেট সদর উপজেলা নির্বাচনে জনপ্রিয়তার জুয়ার উঠেছে অধ্যক্ষ সুজাত আলী রফিকেরআবারও ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হতে চান এড. আবুল হোসেন ১১ বছর স্বাস্থ্য সহকারী পদে কাজ করেও স্বাস্থ্য সহকারী হতে পারেননি ২১ জন যুবক।তীব্র তাপদাহ: ঘাম, প্রখর রোদ উপেক্ষা করেও ফসলের মাঠে কৃষকর কৃষাণী।জাতীয় নেতা আব্দুস সামাদ আজাদের ১৯তম মৃত্যু বার্ষিকী।সুনামগঞ্জে এডিবির সেফগার্ড পলিসি সংশোধনের দাবীতে কর্মসূচী। 

হাওরে বিলুপ্তির পথে “জাতীয় ফুল শাপলা”

তৌহিদ চৌধুরী প্রদীপ, নিজস্ব প্রতিনিধি
  • সংবাদ প্রকাশ শনিবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২৩
  • ৫৮১ বার পড়া হয়েছে

লাল-সবুজের বাংলাদেশে “জাতীয় ফুল শাপলা” এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। দেখা মিলছেনা শালুকেরও। সুনামগঞ্জে বর্ষার শেষ মৌসুমে হাওরের আনাচে-কানাচে পড়ে থাকা জলাভূমি, পুকুর-ডোবা, নদী-নালা ও খাল-বিলে শাপলা গাছ দেখা যেত। আর এই জলজ উদ্ভিদ শাপলা গাছে প্রষ্পুটিত থাকত ফুটন্ত শাপলা ফুল। শরৎ ও হেমন্ত কালে গ্রামীণ হাওর এলাকায় অপরূপ নয়নাভিরাম সৌন্দর্যে শোভিত হত । কালের আবর্তনে এখন এমন অপরূপ সৌন্দর্য আর চোখে পড়েনা।

এই জলজ উদ্ভিদ কোন প্রকার পরিচর্যা ছাড়াই গ্রাম-গঞ্জের পুকুর, ডোবা, জলাশয়ে জন্মে থাকে। শাপলা ফুল ফোটার পর কিছু দিনের মধ্যে ফল জন্ম নেয়। আর ওই ফলের ভেতরে থাকে কালো কালো দানা। এটাকে ভিন্ন এলাকায় লোকজন ভিন্ন নামে ডাকে-“ড্যাপ, ভেট, চাউলিয়া ইত্যাদি। একাধিক গুণগত মানের এই শাপলার ডাটা যেমন সবজি হিসেবে খাওয়া যায়, অন্যদিকে শাপলার মূল ফল ড্যাপ খেতেও ভিন্ন রকম স্বাধ অনুভব হয় ।শাপলার চাল রোদে শুকিয়ে মহিলারা ভাজতো ঢ্যাপের খৈ। যা খেতেও ভিন্ন রকম মজাদার। বর্ষা শেষ-শেষে ছেলে-মেয়েরা ডোবা নালা থেকে কুড়িয়ে আনতো শাপলার ভেট আর শালুক। আগুনে পুড়ে ও সিদ্ধ করে শালুক খেতে দারুণ স্বাদ। যা খুবই পুষ্টিকর খাদ্য হিসেবে জানা গেছে।

বৃহত্তর সিলেটের সব জেলায় শাপলা ফুলের ডাটা ও ভেটের বেশ চাহিদা রয়েছে। তরকারি হিসেবে সুস্বাদু এই জলজ উদ্ভিদ শাপলা। আগে বর্ষা মৌসুমে বিভিন্ন হাট বাজারে এই শাপলা সবজি হিসেবে ব্যাপক বিক্রি হতো। কিন্তু সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ, তাহিরপুর, ধর্মপাশা, বিশ্বম্ভরপুর, দিরাই, শাল্লা, জগন্নাথপুর, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ সহ সব ক’টি উপজেলার হাওরে আগের মতো শাপলার দেখা মিলছেনা। হাওর এলাকায় বিলুপ্ত প্রায় এই শাপলা এখন স্মৃতির আয়নায় কাল্পনিক ভাবেই প্রষ্পুটিত হয়ে আছে। কারণ হিসেবে দেখা গেছে, আগের সব পুকুর, নদী, খাল ভরাট করে মানুষের নানা মুখী কর্মকান্ড ও কৃষিতে অতিমাত্রায় আগাছা নাশক ওষুধ প্রয়োগের কারণে শাপলার জন্মস্থলগুলো ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।

হাওর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে দু’একটি পুকুরে, ডোবায়, ঝিলে ও বোরো জমির ক্ষেতে কিছু শাপলা ফুটে থাকতে দেখা গেছে। যার মধ্যে এলাকায় কয়েকটি পুকুরে ও হাওরের উজান জমিতে কিছু শাপলা ফুল চোখে পড়লেও আগের মতো নয়। বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তান রফিকুল ইসলাম বলেন, হাওরে শাপলা ফুল নেই। আমাদের বাচ্চারা পাঠ্য বই এ জাতীয় ফুল শাপলা ফুল কে জানে। কিন্তু বাস্তবে কয়জন বাচ্চারা শাপলা ফুল দেখছে। লক্ষ্মীপুর গ্রামের সমাজ কর্মী মো: মহিবুর রহমান বলেন, আমরা ছোট বেলায় হাওরে প্রচুর পরিমান শাপলা-শালুক দেখছি, খাইছি সৌন্দর্য উপভোগ করছি। এখন আমাদের সন্তানরা শাপলা ফুল বাস্তবে দেখেই না। কিছু দেখলেও অধিকাংশ বাচ্চারা বই ছাড়া শাপলা ফুল দেখেই না বলে মন্তব্য করেন। তারা সরকারী ভাবে জাতীয় ফুল শাপলা চাষ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আহবান জানান। না হয় এমন এক সময় আসবে। আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মরা শুধু জাতীয় ফুল শাপলা জানবে কিন্ত বাস্তবে তা দেখবেনা।

শাপলা মূলত বর্ষার শেষ থেকে শরৎ- হেমন্ত কালে গ্রাম-গঞ্জের পুকুর, ডোবা, জলাশয়গুলোতে জন্মে থাকে। হাওরের নীচু জমিগুলোতে বিভিন্ন ধরণের ফসল চাষ হচ্ছে। ফলে শাপলা জন্মানোর সুযোগ পাচ্ছে না। আর পুকুর জলাশয়গুলো পরিষ্কার করে বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষের কারণে পুকুর গুলোতেও শাপলার বংশ বিস্তারের সুযোগ পাচ্ছে না। তাই আগের মত আর শাপলা দেখা যায় না।এদিকে কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জের বিস্তৃত হাওর এলাকাতে বাণিজ্যিকভাবে শাপলা চাষের সুযোগ রয়েছে। এতে করে বেকার সমস্যা সমাধান হতে পারে। রাস্তার ধারের পতিত খালগুলো শাপলা উৎপাদনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। এতে করে সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি পাশাপাশি শাপলা সবজি হিসেবে চাহিদা মিটতে পারে।

এ ব্যাপারে জামালগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আলাউদ্দিন বলেন, জামালগঞ্জ উপজেলায় পতিত জমি ও গর্ত জমিতে মাছ চাষ করার কারণে জাতীয় ফুল শাপলা এখন বিলুপ্তির পথে।

সুনামগঞ্জের কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম মুঠো ফোনে বলেন, সুনামগঞ্জের হাওরে জমি পতিত না‌ থাকায় ও পুকুর, ডোবা-জলাশয়ে মাছ চাষের কারনে শাপলার বংশ বিস্তার হচ্ছে না। তবে সরকারী ভাবে চাষের উদ্যোগ নিয়ে এই জাতীয় ফুল ধরে রাখা খুবই প্রয়োজন।

সর্বশেষ সংবাদ পেতে চোখ রাখুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সব ধরনের সংবাদ
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধনকৃত পত্রিকা। © All rights reserved © 2018-2024 Haworbarta.com
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Jp Host BD
jphostbd-2281