জামালগঞ্জ বিশেষ প্রতিনিধি।
চলতি মৌসুমে সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার সকল হাওরের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ করেছে উপজেলা প্রশাসন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বোরো ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ শেষ করতে বিলম্ব হলেও বর্তমানে তা সম্পুর্ণ হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন। এতে করে আগাম বন্যা থেকে হাওরের ফসল রক্ষা পাবে। এ কারণে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছেন এই অঞ্চলের কৃষকেরা।
জানা গেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে চলতি বছরে জামালগঞ্জের হাওরে প্রায় ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৮৫ কিলোমিটার বাঁধের কাজ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪৮ কিলোমিটার নতুন বাঁধ নির্মাণ ও ১৩৭ কিলোমিটার পুরোনো বাঁধ সংস্কার করা হয়েছে। এসব বাঁধ নির্মাণে ৪০টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠন করা হয়েছিল।
এর আগে হাওরের বোরো চাষিরা সঠিক সময়ে জমির ফসল ঘরে তোলা নিয়ে প্রতিবছরই আগাম বন্যার শঙ্কায় থাকতেন। কারণ গত, ২০১৭ সালে জামালগঞ্জের হাওরে পাহাড়ি ঢল আর টানা বর্ষণে পানির নিচে তলিয়ে যায় কৃষকের হাজার হাজার হেক্টর জমির ধান। এতে ব্যাপক ক্ষতিতে পড়েন তাঁরা। তখন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন হাওর হেলিকপ্টারে পরিদর্শন করেন। তারপর ২০১৮ সাল থেকে হাওরের কৃষকদের সেই ক্ষতির হাত থেকে রক্ষায় ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। এর ধারাবাহিকতায় আগাম বন্যা থেকে ফসল রক্ষা করতে জামালগঞ্জের হাওরে বাঁধ নির্মাণ ও মেরামত করা হয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী গত বছরের ডিসেম্বর মাস থেকে বাঁধের কাজ শুরু করে নির্ধারিত সময় ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাঁধের কাজ সম্পূর্ণ করার কথা থাকলেও পাউবো বিলম্বে বিল প্রদান ও পিআইসিদের কিছু ঢিলেমির কারনে তা সম্ভব হয়নি।
তবে বর্তমানে দূ্র্বা লাগানোসহ বাঁধের কাজ সম্পূর্ণ শেষ হওয়ায় আশঙ্কামুক্ত হাওরের কৃষকেরা।
উপজেলার উত্তর ইউনিয়নের উত্তর কামলাবাজ গ্রামের কৃষক আব্দুস সাত্তার বাদশা বলেন, ২০১৭ সালের আগাম বন্যায় আমাদের একমাত্র বোরো ফসল পানিতে তলিয়ে যায় এবং জমি থেকে এক মুঠো ধানও ঘরে তুলতে পারিনি। পরের বছর থেকে কৃষকদের দিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করে বাঁধ নির্মাণ শুরু হওয়ায় স্বস্তি মিলেছে কৃষকের মনে। এরপর থেকে আর কোনদিন আমাদের ফসল অন্তত পানিতে তলিয়ে যায়নি।
হাওর বাঁচাও আন্দোলনের জামালগঞ্জ উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও গণমাধ্যম ব্যাক্তি অঞ্জন পুরকায়স্থ বলেন, এ বছর বাঁধের কাজ শেষ হতে একটু বিলম্ব হলেও বর্তমানে শেষ হয়েছে।
পাগনার হাওরের ৩৪,৩৫ নং পিআইসি (বোগলা খালী), মহালিয়া হাওরের ৬নং পিআইসি ও হালির হাওরের ১৯ নং পিআইসির (গনিয়ার কাড়া) বাঁধের কাজে কম্পেকশনসহ ভালোভাবে নজর রাখতে হবে। হাওরে এই বাঁধগুলোই গুরুত্বপূর্ণ।
এদিকে হাওর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠে এখন শুধুই সবুজের সমারোহ। ধানগাছ তার সবুজ রং বদল করে ধানে সোনালি রং ধারণ করেছে। উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে এ বছর জামালগঞ্জের হাওরে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর ফসলি জমিতে।
এ ব্যাপারে জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও হাওর ফসল রক্ষা প্রকল্প বাস্তবায়ন মনিটরিং কমিটির সভাপতি বিশ্বজিত দেব আজকের পত্রিকাকে বলেন, নির্ধারিত সময়ে হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ শেষ করতে আমরা প্রতিনিয়ত তদারকি করেছি। ঝুঁকিপূর্ণ কিছু বাঁধে আমাদের নির্ধারিত সময়ের চেয়ে অতিরিক্ত সময় লেগেছে। কারণ হালির হাওরের ১৯ নং পিআইসি (গনিয়ার কাড়া) বাঁধ নদীর তীরবর্তী হওয়ায় নদী ভাঙ্গনের মুখে পড়েছিল। এটাকে পূনরায় সংস্কার করা হয়েছে। বর্তমানে সব কাজ সন্তোষজনক হয়েছে। হাওরের কৃষকেরা তাদের একমাত্র বোরো ধান ঘরে তুলতে পারবেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাউছার উদ্দিন সুমন
নির্বাহী সম্পাদক: আনিছুর রহমান পলাশ
বার্তা সম্পাদক: শহিদুল ইসলাম রেদুয়ান
সাব এডিটর: আবু তাহের, আফতাব উদ্দিন।