হাওড় বার্তাঃ
ভালোবাসা কখনো শেষ হয় না। আক্ষরিক অর্থে ভালোবাসা দিনকে দিন সৌন্দর্য প্রকাশ করে। ভোর যেমন প্রতি দিন সূর্য কে নতুন ভাবে প্রকাশ করে,ঠিক ভালোবাসাটাও তাই। প্রিয় মানুষটার ভালোবাসা প্রতিটি ভোরেই সৌন্দর্য বাড়ায়। সত্যিকারার্থে ভালোবাসা কখনো পুরাতন হয় না।
আমরা যেমন প্রতিদিন ভোরে সূর্য কে নতুনত্ব নিয়ে দেখি,ঠিক একই সূর্য প্রতিদিন দেখার পরও যখন আমাদের কোনো একঘেয়েমীতা কাজ করে না। যেমন প্রতিটি ভোরেই আমরা তাঁকে নতুন ভাবে গ্রহণ করি। ঠিক আমাদের প্রিয় মানুষটাও আমাদের কাছে তেমন। এই ধরুন মেঘ-মালার কথাই। আমরা যারা মেঘ পছন্দ করি। আমরা কিন্তু কখনো মেঘ-মালার প্রতি কিঞ্চিত পরিমাণ বিরক্তিবোধ করি না। অথচ শরতের আকাশ জুড়ে আমরা প্রতিটা মূহুর্তে দুরন্ত মেঘ দেখি।
এই যে এত দেখি।
মেঘের এত ওড়াউড়ি আর ছড়াছড়ি।
তারপরও আমাদের নেই কোনো একঘেয়েমীতা।
বরং তা আমাদের বিরক্তি বা একঘেয়েমীতার কারণ না হয়ে উল্টো আমাদের অভিভূত করে।
আমাদের আন্দোলিত করে।
অবাক বিস্ময়ে আমরা মন উজাড় করে দিই মেঘ-মালার কাছে।
এই যে মেঘ-মালার সাথে আমাদের প্রেম।
আমাদের প্রীতি-ভালোবাসা।
তা কখনো নিঃশেষ হয় না।
বরংচ সৌন্দর্য্যতা বাঁড়ায় অবিরত।
তেমনি আমাদের ভালোবাসাটাও।
ঐ প্রতি ভোরের সূর্য আর নিত্য দিনের মেঘ-মালার মতোই সৌন্দর্য বাঁড়ায় অবিরত-অবিশ্রান্ত।
হাজারো খুনসুটি আর বেলা-অবেলায় মান-অভিমান কখনো কাউকে দূরে ঠেলে দেয় না।
কোনো কারণ ছাড়াই অভিমানের ঝড় ভালোবাসায় কখনো দূরত্ব আনে না।
বরং আরো কাছে নিয়ে বুঝতে ও বুঝাতে চেষ্টা করে।
আজ এমনি একটি ভালোবাসার গল্প শোনাবো তোমাদের।
নীল আর প্রীতি!
যেন ভালোবাসার এক চমকপ্রদ বন্ধন।
দূরন্ত-আর উড়ন্ত দুটি মনের এক অভূতপূর্ব মিলন।
সুখ যেনো তাদের কাছে নেহাতই মূল্যহীন।
একে-অপরের দুঃখ গুলোই যেন তাদের আপন।
এই দুঃখ গুলোই যেন তাদের আরো কাছে নিয়ে আসে।
হৃদপিণ্ডের গভীর হতে গভীরে নিয়ে যায়।
একটুখানি দুঃখের মধ্যে প্রীতির অমিয় লাল শিমুল ঝরা হাঁসিটিই যেন তাদের সমস্ত সুখ!
এই হাসিই মুছে দেয় তাদের দুঃখ-ক্লেশ।
জ্বি!
বলছিলাম নীল আর প্রীতির ভালোবাসার কথা।
দুটি মনই অবুঝ।
তবে সব থেকে বেশি অবুঝ নীল।
বয়স অবশ্য কম হয়নি।
তবুও প্রীতিকে ঘিরে তার এই অবুঝ পরায়ণতা বয়সের তুলনায় ঢের।
যদিও প্রীতি ছাড়া অন্য কোথাও তার এই অবুঝ পরায়ণতা দেখা যায় না।
এই যে তার এই অবুঝ পরায়ণতা এটাই প্রীতির কাছে তার শ্রেষ্ঠ আশ্রয়।
দিন শেষে সমস্ত ক্লান্তি আর ক্লেশ ধুয়ে-মুছে ফেলার এক নিরাপদ স্থান।
বলছিলাম দুটি মনই দুরন্ত আর উড়ন্ত।
বুঝতেই পারছেন ঘরে বসে আকাশের বদলে ঘরের ছাঁদ দেখার লোক নয় ওরা।
ঘুরে বেড়ানো তাদের সবচেয়ে বড় সখ।
চিন্তা শক্তি জুড়ে একটাই ঘোরপাক খায় চলো ঘুরে আসি কোথাও।
অচেনা-অচিন কোনো এক দেশে।
যেখানে নেই জনমানব,নেই কোনো কোলাহল।
তারা চলেও যায়।
মূহুর্তেই ঘুরতে চলে যায় অচিন কোনো এক দেশে।যেখানে তাদের কেউ চিনে না।কেউ জানে না তাদের।
তারা উঠে যায় পাহাড়ে।
মেঘ ছুঁয় এক সাথে।
এই ঘুরতে যাওয়াতে প্রীতির বায়না একটাই যে নীলের কাঁধে ছড়বে।
ব্যস-যেই বায়না সেই কাজ।
নীল প্রীতিকে তুলে নেয় তার চওড়া কাঁধে।
এ দিকে নীলও প্রস্তুত থাকে কখন প্রীতি ছড়বে তার প্রশস্ত কাঁধে।
কাঁধে উঠে প্রীতির এ কি আনন্দ।
হাসছে আর দোলছে।
যেন পৃথিবীর সমস্ত সুখ আজ জড়ো হয়েছে তার কাছে।
যে সুখ হাঁসির সাথে ঝর্ণা হয়ে নীলের গাঁ বেয়ে ঝরছে গোলাপ হয়ে।
যেন একটি ডানাযুক্ত পাখি উড়ছে মেঘ ছুঁয়ে।
আলিঙ্গন করছে আকাশের বিশাল শূণ্যতা।
আবদ্ধ জীবন তাদের ভালো লাগে না।
একঘেঁয়েমী করে তুলে তাদের।
ছুঁটাছুঁটি করতে ইচ্ছে হলেও তা আর হয়ে উঠে না।
সময় হয়ে উঠে না আকাশ দেখার।
সাগরের বুকে তলিয়ে যাওয়া সূর্যটা দেখা হয় না তাদের।
ইস-এই একঘেয়েমীতা আর ভালো লাগছে না।
চলো না কোথায় ঘুরে আসি।
অপেক্ষার প্রহর গুণতে গুণতে এক মেঘের দিনে দৃঢ় পায়ে এগিয়ে আসলো সময়।
আজ তাদের আকাশ দেখিয়েই ছাড়বেই।
বেচারা সময় যেনো বিশাল এক ক্ষোভ নিয়ে হাজির হলো নীল-প্রীতির কাছে।
ধমকের সুরে বলে-নাও ঘুরে আসো এবার।
শুধু তো আমার দোষ!
যাও আজ আমি তোমাদের।
ঘুরে আসো আজ যেথায় মন চায়।
তবুও তাদের বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় কিছু একটা।
কিন্তু বেচারা সময় আজ নাছোড়বান্দা।
আজ তাদের ঘুরিয়েই ছাড়বে।
শেষমেষ সময় তাদের অনুকূলেই হলো।
বেড়িয়ে গেলো দুরন্ত দুটি মন।
যাওয়া যায় কোথায়!
ভাবতে ভাবতে ঠিক হলো আজ তারা পাহাড় দেখবে।
আলিঙ্গন করবে মেঘ-পাহাড়ের অপূর্ব রূপ।
মিশে যাবে পাহাড়-মেঘের ভিঁড়ে।
যেই ভাবা সেই কাজ।
উড়ন্ত মন দুটোর যাত্রা পাহাড় বিলাসের দিকে।
গাড়ি চলছে তো চলছেই।তবে গাড়ি থেকে যেন তাদের মন দুটি চলছে অনেক বেশি গতিতে।
কি তাহাদের প্রেম!
কি তাহাদের প্রীতি!!
এ যেন সোনায় সোহাগা।
নীলের চোখ ভর্তি প্রীতির জন্য মোহ।
ঠিক প্রীতিও তার চোখ ভর্তি করে রেখেছে নীলের জন্য অফুরন্ত ভালোবাসা।
নীল প্রীতির চোখে তাঁকালেও,প্রীতি যেন তাকাতেই পারছে না নীলের চোখে।
লাজুক চোখ দুটি যেন লজ্জায় লাল হয়ে যায়।
ঠুঠের কোণে এক গোলাপ ঝরা হাঁসি দিয়ে লজ্জায় মাথা নিচু করে শক্ত মুঠোয় আবদ্ধ করে নেয় নীলের হাত।
লাজুক সুরে বলে উঠে- আমি তাঁকাতে পারি না তোমার চোখে।
ভিষণ লজ্জায় চেয়ে যাই আমি।
কিন্তু তাঁকাতে যে হবেই।
নীলের জোড়া-জুড়িতে প্রীতি খানিক সময় তাকালেও আবার লজ্জায় চোখ দুটি অবনত হয়ে যায়।
নীল প্রীতিকে বুকে জড়িয়ে নেয়।
প্রীতি শক্ত ভাবে আঁকড়ে ধরে নীলকে।
এত শক্ত করে জড়িয়ে রেখেও যেন হচ্ছে না,সবটুকু দিয়ে আঁকড়ে ধরে।
যেন দুটি মানুষ আলাদা ভাবে না হয়ে এক হলেও পারতো।
দেহ দুটি হলেও সেই কবেই মন দুটি মিলে এক হয়ে গিয়েছে।
নীল প্রীতির কঁপালে-মাথায় আলতো চুমু খায়।
মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে জড়িয়ে রাখে বুকে।
যদি বুকে ভরে রাখা যেতো তাহলে এতটুকু কালবিলম্ব না করে প্রীতিকে যতনে বুকের গভীরে নিতো ভরে।
যদিও প্রীতি জায়গা করে নিয়েছে নীলের হৃদয়ের অতল গভীরে।
প্রীতির যেনো সইছেই না।
পাহাড় আর কত দূর।
ইস-অপেক্ষা আর ভাল্লাগছে না।
নীল শান্তনা দিচ্ছে-এইতো আর খানিকটা পথ।আমরা কাছাকাছিই চলে আসছি।আর একটু সময়।
-হুম বলছে আর একটু সময়।দেইখো আরো অনেক সময় লাগবে।যেন অভিমানের সুরে বললো প্রীতি।
এই শোনো-
দেখো এখন সময় যাচ্ছে না।কিন্তু আসার সময় ঠিকই তাড়াতাড়ি চলে আসবো।
আসার সময় আর এত দূর মনে হবে না।
দেখবা খুব তাড়াতাড়ি ফিরে যাব।
বিস্ময়ের সুরে নীল জানতে চাইলো-তাই নাকি গো!
-হুম।দেখো!!
নীল প্রীতি কে আগলে ধরে- এইতো আমরা চলে এসেছি।আর একটু সময়।ততক্ষণ আমার বুকে শুয়ে থাকো তুমি।
প্রীতি-হুমমম।বুকে কিন্তু খুব ব্যাথা দিবো।
নীল- হুমম।দেখি কতো ব্যাথা দিতে পারো।
প্রীতি-এইতো দিচ্ছি।নখ দিয়ে অনেক অনেক ব্যাথা দিচ্ছি।
নীল-হুমম দাও।দেখি আর কতো পারো।
এই খুনসুটি করতে করতে গাড়ি থেমে গেলো।
বাহিরে চোখ যেতেই বিশাল পাহাড় পড়লো প্রীতির চোখে।
ঐ এক পাহাড়,তার পেছনে আরেক পাহাড়।
তার সামনে আরো ছোট এক পাহাড়।
বিস্ময়ের চোখে নীল কে ডেকে-এই দেখো কত সুন্দর পাহাড়!
নীল- হুম চলো এবার মিশে যাই ঐ মেঘ-পাহাড়ে।
যত খুশি উড়ো আকাশে।
প্রীতি নীলের হাত ধরে এগুতে থাকে পাহাড়ের দিকে।
হালকা মেঘ জমেছে পাহাড়ের বুকে।
এতে যেনো পাহাড়ের সৌন্দর্য্যতা আরো বেড়ে গেলো।
পাহাড়ের বুক জুড়ে কখনো বিশাল,কখনো ছোট ছোট গাছ-পালা।
আবার কখনো দেখা যাচ্ছে লালচে মাটি।
তারা পাহাড়ের কাছাকাছি চলে আসে।
নীল প্রীতি কে এক এক করে দেখাচ্ছে প্রতিটি পাহাড়।
এই এক পাহাড়।ঐ পাহাড়ের পেছনে দেখো আরেক পাহাড়।
ঐতো দেখো এই পাহাড়ের সামনে ছোট একটি টিলা।
দেখেছো কি মেঘ জমেছে পাহাড়ের বুকে!
প্রীতি নীলের বুকে মাথা রেখে হারিয়ে যায় মেঘ-পাহাড়ে।
কি অপরূপ,অপূর্ব মেঘ-পাহাড়ের সৌন্দর্য।
প্রীতির যেনো চোখেই সরছে না।
নীলের বুকে জড়িয়ে থেকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে মেঘ-পাহাড়ে।
নীল আঙুল উঁচিয়ে উঁচিয়ে দেখাচ্ছে এটা-ওঠা।
ঐ যে দেখো পাহাড়ের বুকে মেঘের আঁড়ালে দেখা যাচ্ছে এক নেটওয়ার্ক টাওয়ার।
ঐখানে মানুষের বসতি আছে।
দেখো টাওয়ারটি মেঘের আঁড়ালে থেকে কেমন করে আমাদের সাথে লুকোচুরি খেলছে।
প্রীতি-হুমম।
চলো ঐ টাওয়ারের চূড়ায় চড়ি।
নীল-হুম।চলো।
নীল-প্রীতি হারিয়ে যায় মেঘ-পাহাড়ে।
উড়ন্ত হৃদয় দুটি আজ মানছে না কোনো বারণ।
মেঘ-পাহাড় ঘিরে আজ তাঁরা উড়ছে তো উড়ছেই।
আকাশের বিশাল শূণ্যতা আজ তাঁরা ছুঁয়ে গিয়েছে।
আজকের সমস্ত আকাশটাই যেনো তাদের।
আকাশও আজ চেয়েছে অভিনব রূপে।
কোথাও শুষ্কতার লেশটুকুও নেই।
চারদিকে আজ শুধু সতেজতা।
এত উত্তপ্ত সূর্যটাও আজ কোথাও এতটুকু উত্তাপ ছড়িয়ে দেয়নি।
এক মুঠো কোমলতা দিয়ে ভরিয়ে দিয়েছে সমস্ত আকাশ।
এ যেনো আজ গোটা প্রকৃতিই ছিলো তাদের অপেক্ষায়।
ডানাহীন দুটি পাখি আজ দখলে নিয়েছে সমস্ত কিছু।
এতটুকু ক্লান্তিও নেই আজ দুটি মনে।
এদিকে ফেরার ঘণ্টা বেঁজে গিয়েছে।
ইস-সময় যে এতো তাড়াতাড়ি চলে যায় কেনো!
মন দুটো ফিরতে না চাইলেও অনিচ্ছা সত্ত্বেও ফিরতে হলো মেঘ-পাহাড়ের মিলন হতে।
মন চাইছে না চলে আসতো।
তবুও আসতে হলো তাদের।
ভাবটা এমন যেনো-এতটুকুও সময়ও তাদের ঘুরা হয়নি।
অথচ ঘুরা হয়ে গিয়েছে অনেক অনেক সময়।
তবুও ফিরতে চাইছে না অবুঝ হৃদয় দুটি।
এক প্রকার অনিচ্ছাকৃত ভাবেই ফেরা হলো তাদের।
ফিরে এলেও তাঁরা পড়ে রইলো ঐ মেঘ-পাহাড়ে।
ঐ পাহাড়ের সারিতে।
মেঘের আঁড়ালে থেকে লুকোচুরি খেলা ঐ টাওয়ারের চূড়ায়।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাউছার উদ্দিন সুমন
নির্বাহী সম্পাদক: আনিছুর রহমান পলাশ
বার্তা সম্পাদক: শহিদুল ইসলাম রেদুয়ান
সাব এডিটর: আবু তাহের, আফতাব উদ্দিন।